4G
৪জি
৪জি (ইংরেজি: 4G) হল ফোর্থ জেনারেশন বা চতুর্থ প্রজন্ম শব্দটির
সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি ব্যবহৃত হয় চতুর্থ প্রজন্মের তারবিহীন টেলিযোগাযোগ
প্রযুক্তিকে বুঝাতে। এটি তৃতীয়
প্রজন্মের (থ্রিজি) টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির উত্তরসূরি। ফোরজি প্রযুক্তি ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা অন্যান্য মোবাইল যন্ত্রে
মোবাইল ব্রডব্যান্ড|মোবাইল আল্ট্রা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। ফোরজি নেটওয়ার্কে
যেসব সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে সংশোধিত মোবাইল ওয়েব সেবা, আইপি টেলিফোনি, গেমিং সেবা, এইচডিটিভি|হাই-ডেফিনিশন মোবাইল টিভি, ভিডিও কনফারেন্স, ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন এবং ক্লাউড
কম্পিউটিং উল্লেখযোগ্য।
বাণিজ্যিকভাবে দুই ধরণের ফোরজি প্রযুক্তি
স্থাপিত হয়েছে: মোবাইল ওয়াইম্যাক্স (২০০৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম) এবং লং
টার্ম ইভোলিউশন বা এলটিই (২০০৯ সালে নরওয়ের ওসলো এবং সুইডেনের স্টকহোমে প্রথম)।
তবে বর্তমানে ৪জি এর সেসব প্রাথমিক সংস্করণগুলোকে বাস্তবিক ৪জি হিসেবে দাবী করা
যাবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে, যার প্রধান কারণ হল আইএমটি অ্যাডভান্সড এর কিছু প্রয়োজনীয় নিয়ম।
যুক্তরাষ্ট্রে স্প্রিন্ট নেক্সটেল ২০০৮ সালে মোবাইল ওয়াইম্যাক্স নেটওয়ার্ক স্থাপন করে এবং
মেট্রোপিসিএস ২০১০ সালে প্রথম এলটিই সেবা চালু করে। তারবিহীন
ইউএসবি মডেম প্রথম থেকেই লভ্য ছিল, কিন্তু ওয়াইম্যাক্স স্মার্টফোন লভ্য হয় ২০১০ সাল থেকে এবং এলটিই স্মার্টফোন ২০১১ সাল থেকে। তবে ইউরোপীয় বাজারে বর্তমানে
ওয়াইম্যাক্স স্মার্টফোন বিক্রয় বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে ৪জি লভ্য না হলেও, কিছু ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী কোম্পানির
দাবী যে তারা ওআইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে, যদিও তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ফোরজি-এর
প্রযুক্তিসমূহ
২০০৮ সালের মার্চে আইইউটি-আর|আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের বেতার
যোগাযোগ সেক্টর ফোরজি এর প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তুসমূহের একটি রূপরেখা প্রবর্তন করে।
তারা উচ্চ মোবিলিটি যোগাযোগের জন্য প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট এবং নিম্ন মোবিলিটি
যোগাযোগের জন্য প্রতি সেকেন্ডে ১ গিগাবিট গতি প্রণয়ন করে।
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স এবং এলটিই-এর প্রথম
অবমুক্তির পর থেকে যেসব সেবা প্রতি সেকেন্ডে এক গিগাবিটের কম গতি প্রদান করে, আইইউটি-আর এর নীতি অনুযায়ী সেগুলোকে ফোরজি
সেবা বলা যাবে না,
যদিও সেবা
প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেগুলোকে ফোরজি সেবা বলেই বাজারজাত করে।
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স রিলিজ ২ এবং
এলটিই-অ্যাডভান্সড আইএমটি-অ্যাডভান্সডের বিষয়বস্তু সমর্থন করে এবং এর সাহায্যে
প্রতি সেকেন্ডে এক গিগাবিট গতি সম্পন্ন সেবা প্রদান করাও সম্ভব। এই সেবাগুলো ২০১৩ সালে অবমুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আগের প্রজন্মগুলো সার্কিট সুইচিং|সার্কিট-সুইচড টেলিফোনি সমর্থন করলেও, ফোরজি তা করেনা। তবে এটি ইন্টারনেট প্রটোকল
ভিত্তিক সকল সেবা যেমন: আইপি টেলিফোনি সমর্থন করে। আশা করা হয় যে পরবর্তী
প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিগুলো পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিগুলোর তুলনায়
অধিক সস্তা এবং উন্নততর হবে। অনেক দেশে এখনও জিএসএম, ইউএমটিএস এবং এলটিই নেটওয়ার্ক একই সাথে চালু
আছে।
পটভূমি
টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রজন্মের
নামকরণের মাধ্যমে মূলত টেলিযোগাযোগ সেবার কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে বোঝায়, যেমন, নতুন ধরণের স্থানান্তর প্রযুক্তি, উচ্চতর পিক ডাটা রেট, নতুন ফ্রেকুয়েন্সি ব্যান্ড, সমকালীন তথ্য স্থানান্তরের জন্য অধিক ধারণ ক্ষমতা
ইত্যাদি। দেখা যায় যে প্রায় দশ বছর পর পর টেলিযোগাযোগ প্রজন্মের পরিবর্তন ঘটে।
এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালের অ্যানালগ (১জি) থেকে ১৯৯২ সালে ডিজিটাল
(২জি) স্থানান্তর প্রযুক্তিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে। এবং এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে, যার মাধ্যমে ২০০১ সালে আসে ৩জি
মাল্টি-মিডিয়া সমর্থন,
স্প্রেড
স্পেক্ট্রাম স্থানান্তর এবং কমপক্ষে ২০০ কিলোবিট/সে পিক ডাটা রেট। এরপর ২০১১/২০১২
সালে আসে আসল ৪জি,
যা সমর্থন করে
অল-ইন্টারনেট প্রটোকল ভিত্তিক প্যাকেট সুইচড নেটওয়ার্ক, যা ব্যবহারকারীকে আল্ট্রা ব্রডব্যান্ড
ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে থাকে।
আইটিইউ ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হবে এমন
প্রযুক্তিসমূহের জন্য কিছু শর্ত আরোপ করলেও, তারা সেগুলোর মানোন্নয়নের জন্য কোন কাজ
করেনা। বরং অন্য কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন, আইইইই, দ্য ওআইম্যাক্স ফোরাম এবং ৩জিপিপি এসব কাজ
করে।
১৯৯০ এর মাঝামাঝি সময়ে, আইটিইউ-আর অবমুক্ত করে আইএমটি-২০০০ শর্তসমূহ, যা ৩জি প্রযুক্তির শর্ত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এরপর ২০০৮ সালে তারা ৪জি এর জন্য আইএমটি-অ্যাডভান্সড
শর্তসমূহ প্রণয়ন করে।
ইউএমটিএস পরিবারের সবচেয়ে দ্রুতগতির ৩জি ভিত্তিক প্রযুক্তি হল এইচএসপিএ+, যা ২০০৯ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে
এমআইএমও ছাড়া একটি অ্যান্টেনা ব্যবহার করে ডাউনলিংকে ২৮ মেগাবিট/সে এবং আপলিংকে
২২ মেগাবিট/সে গতি পাওয়া সম্ভব। ২০১১ সালে ডিসি-এইচএসপিএ+বা ২x২ এমআইএমও ব্যবহার করে এই গতিকে ৪২ মেগাবিট/সে
এ উন্নীত করা হয়।
আরও দেখুন
·
মোবাইল রেডিও টেলিফোন ("০জি" হিসেবেও পরিচিত)
·
১জি
·
২জি
·
৩জি
·
এলটিই
(টেলিযোগাযোগ) (৪জি এলটিই)
·
LTE
Advanced|এলটিই অগ্রবর্তী
(৪জি)
·
৫জি
আইএমটি
অ্যাডভান্সনড রিকোয়ারম্যান্টস
ফোরজি সুবিধার ক্ষেত্রে আইএমটি-অ্যাডভান্সড
সেলুলার সিস্টেম নিচের যোগ্যতাগুলো অবশ্যই পূরন করবে । ৪জি প্রযুক্তি হচ্ছে মূলত
আইপিভিত্তিক এক ধরনের নেটওয়ার্ক হাই মোবিলিটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে
১০০ মেগাবাইট গতিসম্পন্ন এবং লো মোবিলিটির যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে ১
গিগাবাইট গতিসম্পন্ন হবে । ৫ থেকে ২০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইডথ, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৪০ মেগাহার্টজ
ব্যান্ডউইডথ ক্ষমতা সম্পন্ন । ইনডোর সুবিধার ক্ষেত্রে, সিস্টেম স্পেকট্রাম এফিশিয়েন্সি হবে, ডাউনলিঙ্ক এর ক্ষেত্রে ৩-বিট/সে./হার্টজ/সেল
এবং আপলিঙ্ক এর ক্ষেত্রে ২.২৫-বিট/সে./হার্টজ/সেল ।
সিস্টেম
স্ট্যান্ডার্ড
২০১০ সালের অক্টোবর মাসে, আইটিইউ-আর ফোরজি প্রযুক্তির দুটি
স্ট্যান্ডার্ড অনুমোদন করে । এর একটি হচ্ছে এলটিই অ্যাডভান্সড এবং অপরটি হচ্ছে
ওয়্যারলেসম্যান অ্যাডভান্সড ।
·
৪জি প্রযুক্তি হচ্ছে মূলত আইপিভিত্তিক এক ধরনের নেটওয়ার্ক
·
হাই মোবিলিটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইট গতিসম্পন্ন এবং
লো মোবিলিটির যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে ১ গিগাবাইট গতিসম্পন্ন হবে ।
·
৫ থেকে ২০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইডথ, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৪০ মেগাহার্টজ
ব্যান্ডউইডথ ক্ষমতা সম্পন্ন ।
·
ইনডোর সুবিধার ক্ষেত্রে, সিস্টেম স্পেকট্রাম এফিশিয়েন্সি হবে, ডাউনলিঙ্ক এর ক্ষেত্রে ৩-বিট/সে./হার্টজ/সেল
এবং আপলিঙ্ক এর ক্ষেত্রে ২.২৫-বিট/সে./হার্টজ/সেল ।
সিস্টেম
স্ট্যান্ডার্ড
২০১০ সালের অক্টোবর মাসে, আইটিইউ-আর ফোরজি প্রযুক্তির দুটি
স্ট্যান্ডার্ড অনুমোদন করে । এর একটি হচ্ছে এলটিই অ্যাডভান্সড এবং অপরটি হচ্ছে
ওয়্যারলেসম্যান অ্যাডভান্সড ।
আইপিভি ৬
সাপোর্ট
ক্রমবর্ধমান আইপির অভাব থেকেই আইপি ভার্সন
৪-এর পর আইপি ভার্সন ৬ বা আইপিভি ৬-এর আবির্ভাব ঘটে । ফোরজি নেটওয়ার্কের ফিচার
আইপিভি ৬ সাপোর্ট । ৪জি প্রযুক্তি যেহেতু একটি আইপিভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, সেহেতু পুরনো আইপিভি ৪-এর ওপরে ভিত্তি করে
নেটওয়ার্ক তৈরি করার কোনো মানে হয় না। ৪জি নেটওয়ার্কের অন্যতম একটি ফিচার হচ্ছে
আইপিভি ৬ সাপোর্ট ।
অ্যাডভান্সড
অ্যান্টেনা সিস্টেম
৪জি নেটওয়ার্কিং সিস্টেমেটিতে অ্যাডভান্সড
অ্যান্টেনা সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে । সাধারণত সাধারণ নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায়
একটি অ্যান্টেনা ব্যবহার করে সিগন্যাল ধরা হয়। কিন্তু ৪জি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে, হ্যান্ডসেটে একাধিক অ্যান্টেনা ব্যবহার করা
হয়। এই প্রযুক্তিটিকে মিমো বলা হয়ে থাকে। এর ফল অনুসারে ব্যান্ডউইডথ খুব ভালো
পাওয়া যায় এবং উচ্চমানের ভয়েস ট্রান্সমিশন ও রিসিভ করা সম্ভব হয় ।
মাল্টিপ্লেক্সিং
এবং অ্যাক্সেস স্কিম
নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মডুলেশন ব্যবস্থার
সর্বশেষ সংযোজন করা হয়েছে ৪জি প্রযুক্তির অ্যাক্সেস স্কিমে । এর মধ্যে রয়েছে
৩জিপিপি লং টার্ম ইভ্যালুয়েশন ব্যবস্থা । এটিই হচ্ছে জিপিআরএস/এজ নেটওয়ার্কের
সর্বাধুনিক স্ট্যান্ডার্ড । এতসব প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে ৪জি প্রযুক্তির
নেটওয়ার্কে ।
No comments