আভুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আব্দুল কালাম(তামিল:அவுல் பக்கிர் ஜைனுலாபுதீன் அப்துல் கலாம்); (১৫ অক্টোবর১৯৩১-২৭ জুলাই২০১৫) ছিলেনভারতীয় প্রজাতন্ত্রেরএকাদশরাষ্ট্রপতি২০০৭)। কালাম তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন
একজন বিজ্ঞানী হিসেবে। পরে তিনি ঘটনাচক্রে রাজনীতিবিদে পরিণত হন। কালামের জন্ম
অধুনা ভারতের¾(২০০২তামিলনাড়ুরাজ্যেররামেশ্বরমে। তিনি পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সেন্ট জোসেফ'স কলেজ থেকে এবং বিমান
প্রযুক্তিবিদ্যা(এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষয় নিয়ে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব
টেকনোলজি (এম আই টি) থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর চল্লিশ বছর তিনি প্রধানতরক্ষা
অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন(ডিআরডিও) ওভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায়(ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ
করেন। ভারতের অসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিকসুসংহত
নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিরসঙ্গে তিনি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিলেন।ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রওমহাকাশযানবাহী রকেটউন্নয়নের কাজে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়।১৯৯৮ সালেপোখরান-দুইপরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন।
এটি ছিল ১৯৭৪ সালেস্মাইলিং বুদ্ধনামে পরিচিত প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর
দ্বিতীয় পরমাণু বোমা পরীক্ষা।
২০০২ সালে কালাম তৎকালীন শাসকদলভারতীয় জনতা পার্টিও বিরোধী দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসেরসমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর
এই পদে আসীন থাকার পর তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন।
ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানভারতরত্নসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার
পেয়েছিলেন কালাম।
প্রথম জীবন ও
শিক্ষা
আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আব্দুল কালাম ১৯৩১
সালের ১৫ অক্টোবরব্রিটিশ ভারতেরমাদ্রাজ
প্রেসিডেন্সির(অধুনাভারতেরতামিলনাড়ুরাজ্যের)রামেশ্বরমেরএকতামিল মুসলমানপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা
জয়নুল-আবেদিন ছিলেন একজন নৌকামালিক এবং মাতা অশিয়াম্মা ছিলেন গৃহবধূ।তাঁর পিতারামেশ্বরমও অধুনা-বিলুপ্তধনুষ্কোডিরমধ্যেহিন্দুতীর্থযাত্রীদের নৌকায় পারাপার করাতেন।কালামের পরিবার ছিল অত্যন্ত গরিব। অল্প বয়স
থেকেই পরিবারের ভরনপোষণের জন্য তাঁকে কাজ করা শুরু করতে হয়।বিদ্যালয়শিক্ষা সমাপ্ত করার পর পিতাকে
সাহায্য করার জন্য তাঁকে সংবাদপত্রে লেখালিখি শুরু করতে হয়।বিদ্যালয়ে তিনি ছিলেন সাধারণ মানের ছাত্র।
কিন্তু তিনি ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও কঠোর পরিশ্রমী ছাত্র। তাঁর শিক্ষাগ্রহণের তীব্র
বাসনা ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি পড়াশোনা করতেন ও অঙ্ক কষতেন।রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল
থেকে শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর কালামতিরুচিরাপল্লিরসেন্ট
জোসেফ'স কলেজেভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে সেই কলেজ থেকে
পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন।পাঠক্রমের শেষের দিকে তিনি পদার্থবিদ্যা
সম্পর্কে উৎসাহ হারিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে চার বছর ওই বিষয় অধ্যয়ন করে নষ্ট করার
জন্য তিনি আক্ষেপ করতেন। ১৯৫৫ সালে তিনিমাদ্রাজে(অধুনাচেন্নাই) চলে আসেন। এখানকারমাদ্রাজ
ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিথেকে তিনি বিমানপ্রযুক্তি শিক্ষা করেন।একটি সিনিয়র ক্লাস প্রোজেক্টে কাজ করার সময়
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিন তাঁর কাজে অগ্রগতি না দেখে অসন্তুষ্ট হন। তিনি ভয় দেখান
তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে তাঁর বৃত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
কালাম তিন দিনেই কাজ শেষ করেন। তা দেখে ডিন খুশি হন। পরে তিনি কালামকে লিখেছিলেন, "আমি তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলাম। তোমাকে
এমন সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেছিলাম যা করা খুব শক্ত।"তিনি অল্পের জন্য যোদ্ধা পাইলট হওয়ার সুযোগ
হারান। উক্ত পরীক্ষায়ভারতীয় বিমানবাহিনীরআট জন কর্মীর দরকার ছিল। তিনি পরীক্ষায় নবম
হয়েছিলেন।
বিজ্ঞানী হিসেবে
পেশাজীবন
তিনি ১৯৬০ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর
ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থারএরোনটিক্যাল
ডেভলপমেন্ট এস্টব্লিশমেন্টেএকজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন। উক্ত
প্রতিষ্ঠানে তিনি একটি ছোটহোভারক্রাফটেরনকশা তৈরি করে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।কালামভারতীয়
জাতীয় মহাকাশ গবেষণা কমিটিতেপ্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী ড.বিক্রম সারাভাইয়েরঅধীনে কাজ করতেন।১৯৬৯ সালে আব্দুল কালামভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায়বদলি হন। সেখানে তিনি ভারতের প্রথম কৃত্রিম
উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী যান (এসএলভি-III)-এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন যা ১৯৮০ সালের
জুলাইয়ে 'রোহিণী' কৃত্রিম উপগ্রহকে তার কক্ষপথে স্থাপন করে।
কালাম ১৯৬৫ সালে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থায় স্বাধীনভাবে একটি বর্ধমান
রকেট প্রকল্পের কাজ শুরু করেন।১৯৬৯ সালে তিনি সরকারে অনুমোদন লাভ করেন এবং
আরও কয়েকজন প্রকৌশলীকে নিয়ে এই প্রোগ্রামের ব্যপ্তি ঘটান।
তিনি ১৯৬৩-৬৪ সালেনাসারল্যাংলি
রিসার্চ সেন্টার,গোডার্ড
স্পেশ ফ্লাইট সেন্টারএবংওয়ালোপ্স
ফ্লাইট ফেসিলিটিপরিদর্শন করেন।তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মাঝেপোলার
স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (পিএসএলভি) এবং এসএলভি-III গড়ার চেষ্টা করেন। তিনি এই কাজে সফল
হয়েছিলেন।
মৃত্যু
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুলাইমেঘালয়েরশিলংশহরে অবস্থিতইন্ডিয়ান
ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টনামক প্রতিষ্ঠানেবসবাসযোগ্য পৃথিবীবিষয়ে বক্তব্য রাখার সময়ভারতীয় প্রমাণ সময়সন্ধ্যা ৬:৩০ নাগাদ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন।
তাঁকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সন্ধ্যাভারতীয় প্রমাণ সময়৭:৪৫ নাগাদ তাঁর মৃত্যু ঘটে।
কালামের মৃতদেহভারতীয় বিমানবাহিনীরএকটি হেলিকপ্টারে করেশিলংথেকেগুয়াহাটিনিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে একটি সি-১৩০
হারকিউলিস বিমানেনতুন দিল্লিরপালাম বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।ভারতের রাষ্ট্রপতিপ্রণব মুখোপাধ্যায়,ভারতের প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদী,দিল্লির
মুখ্যমন্ত্রীঅরবিন্দ কেজরিওয়ালএবং তিন বাহিনীর প্রধান কালামের মরদেহে
শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।এরপর জাতীয় পতাকায় ঢেকে কালামের দেহ ১০, রাজাজি মার্গে তাঁর দিল্লির বাসস্থানে নিয়ে
যাওয়া হলে,
প্রাক্তন
প্রধানমন্ত্রীমনমোহন সিং, কংগ্রেস সভানেত্রীসোনিয়া গান্ধী,রাহুল গান্ধী,উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীঅখিলেশ যাদবসহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিরা শেষ শ্রদ্ধা
জ্ঞাপন করেন
ভারত সরকারপ্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কালামের মৃত্যুতে তাঁর
সম্মানে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা করেন।প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদীতাঁর বক্তব্যে বলেন যে, কালামের মৃত্যু দেশের বিজ্ঞান জগতের জন্য এক
অপূরণীয় ক্ষতি,
কারণ তিনি
ভারতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ও পথ দেখিয়েছিলেন।চতুর্দশ দলাই লামাকালামের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন ও প্রার্থনা করে
বলেন যে,
কালাম শুধুমাত্র
একজন বৈজ্ঞানিক,
শিক্ষাবিদ বা
রাষ্ট্রনেতা ছিলেন না,
তিনি ছিলেন একজন
নিপাট ভদ্রলোক,
সরল ও বিনয়ী।ভূটান সরকার দেশের পতাকা অর্ধনমিত রাখার ও
১০০০টি বাতি প্রজ্জ্বলনের নির্দেশ দেয় এবং ভূটানের প্রধানমন্ত্রীশেরিং তোবগেকালামকে ভারতীয় জনগণের রাষ্ট্রপতি বলে
উল্লেখ করে গভীর শোক প্রকাশ করেন।ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিসুসিলো
বমবাং ইয়ুধোয়োনো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীনাজিব রাজাকও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীলী সিয়েন লুংকালামের প্রতি সম্মান জানান। তথ্যসূত্রঃউইকিপিডিয়া
No comments