বিশ্বে পরিচিত অরুনিমা নামে। পুরো নাম অরুনিমা সিনহা। বয়স তখন ২৫ সবে। পেশায় ভলিবল খেলোয়াড়।
ভারতের উত্তর প্রদেশের আমবেদকার নগরে অরুনিমার নিবাস। জীবনের চরম প্রতিকূল অবস্থাতেও দৃঢ় মনোভাবে
এগিয়ে চলা অরুনিমা গড়েছেন বিশ্ব ইতিহাস। অরুনিমার বাস্তব জীবনের গল্প সিনেমাকেও হার মানিয়েছে।
থমকে যাওয়া জীবন পেয়েছে নতুন পরিচিতি। ভারতের প্রথম নারী প্রতিবন্ধী হিসেবে জয় করেছেন পৃথিবীর
সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট। এভারেস্ট জয়ের মাত্র দু’বছর আগে ট্রেনের নিচে এক পা হারানো এ নারীর জীবন বলতে
গেলে থেমেই গিয়েছিল। প্রসঙ্গত, বিশ্বের প্রথম শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে ১৯৯৮ সালের ২৭ মে এভারেস্ট
জয় করেন ডান পা হারানো ব্রিটেনের ওয়েলসের টম হুইটেকার।
ভারতের উত্তর প্রদেশের আমবেদকার নগরে অরুনিমার নিবাস। জীবনের চরম প্রতিকূল অবস্থাতেও দৃঢ় মনোভাবে
এগিয়ে চলা অরুনিমা গড়েছেন বিশ্ব ইতিহাস। অরুনিমার বাস্তব জীবনের গল্প সিনেমাকেও হার মানিয়েছে।
থমকে যাওয়া জীবন পেয়েছে নতুন পরিচিতি। ভারতের প্রথম নারী প্রতিবন্ধী হিসেবে জয় করেছেন পৃথিবীর
সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট। এভারেস্ট জয়ের মাত্র দু’বছর আগে ট্রেনের নিচে এক পা হারানো এ নারীর জীবন বলতে
গেলে থেমেই গিয়েছিল। প্রসঙ্গত, বিশ্বের প্রথম শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে ১৯৯৮ সালের ২৭ মে এভারেস্ট
জয় করেন ডান পা হারানো ব্রিটেনের ওয়েলসের টম হুইটেকার।
সংজ্ঞাহীন হয়ে ট্র্যাকে ৭ ঘণ্টা পড়ে থাকেন তিনি। যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ডাক্তারকে অরুনিমার হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলতে হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও আরেক জীবনযুদ্ধ অপেক্ষা করছিল অরুনিমার ভাগ্যে।
ইন্ডিয়ান স্পোর্টস মিনিস্ট্রির তরফ থেকে অরুনিমাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।
এছাড়া ‘মিনিস্ট্রি অব স্টেট ফর ইয়ুথ অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড স্পোর্টস’ তাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।
২০১১ সালে অরুনিমার চিকিৎসা শুরু হয় অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে।
টানা চার মাস চিকিৎসার পর একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে প্রস্থেটিক পা সংযোজন করা হয়।
গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে অরুনিমা বলেন, জীবনের এমন কঠিন অবস্থায় চারপাশের মানুষ আমাকে নিয়ে চিন্তিত।
বুঝতে পারলাম কিছু একটা করতে হবে, যেন লোকেরা আমার দিকে করুণার দৃষ্টিতে না তাকায়।
মাউন্ট এভারেস্টে মানুষ হরদম উঠছে, তা খবরের কাগজে পড়েছিলাম। এটা ভেবেই বড় ভাই ও কোচের সঙ্গে এ নিয়ে
কথা বলি। কোচ আমাকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন।
এবারও তার কাছ থেকেই এভারেস্ট জয়ের সাহস অর্জন করলাম।
এদিকে আত্মবিশ্বাসী অরুনিমার দেখা হয় ভারতের প্রথম এভারেস্ট জয়ী নারী বাচেনদ্রি পালের সঙ্গে।
বাচেনদ্রি টাটা স্টিল অ্যাডভেঞ্জার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এরপর অরুনিমা উত্তর কাশীর
‘টাটা স্টিল অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের’ ক্যাম্পে নাম লেখান। এখানে অরুনিমা বাচেন্দ্রি পালের কাছে প্রশিক্ষণ
নিতে শুরু করেন।
২০১২ সালে অরুনিমা জয় করেন আইল্যান্ড পিক (৬১৫০ মিটার)। এরপর শুরু হয় এভারেস্টে ওঠার প্রস্তুতি।
২০১৩ অরুনিমা চামসের কাংরি (৬৬২২ মিটার) উত্তরণ করেন। এরপরেই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
২০১৩ সালের ২১ মে দীর্ঘ ৫২ দিনের ধকল অতিক্রম করে সকালে এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন অরুনিমা।
ভারতীয় ক্রিকেটার যুবরাজ সিং অরুনিমার অনুপ্রেরণার অন্যতম মানুষ। এ প্রসঙ্গে অরুনিমার ভাষ্য, যুবরাজ সিং
আমাকে এক লাখ রুপির একটি চেক দিয়েছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে সরাসরি কথাও বলেন।
তখন আমি জানতে পারি তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। ক্যান্সার থেকে সবে সেরে ওঠেই তিনি ভারতীয় দলে
আবার খেলছেন। যুবরাজের এ জয় অরুনিমার মনে প্রশ্ন জাগে, তিনি পারলে, কেন আমি পারব না।
আমিও জীবনে ভিন্ন একটা কিছু করে দেখাতে পারব। এ ছাড়াও অরুনিমার এ
অর্জনে ভারতের ফার্স্টলেডি শুভ্রা মুখার্জির সহযোগিতার কথা বিশেষভাবে জানান।
জাতীয় নারী ভলিবল দলের খেলোয়াড় থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ। এরপর প্রতিবন্ধী।
জীবনের অদ্ভুত এ গল্পে হার না মানা অরুনিমা তাই এভারেস্ট জয়ের দৃঢ় প্রত্যয়ে জীবনের আরেক পথে এগিয়ে যান।
জয় আসে। ইতিহাস হয়। আজ অরুনিমা নারী বিশ্বের সাহসী প্রতীক। অরুনিমা বিশ্বাস মনে করেন, জীবনের
একটি পথ বন্ধ হলে আরেকটি পথ খুলে যায়। নতুন পথে চলাটা পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য মোটেও সহজ যুদ্ধ নয়।
তবে ভেতরের দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের পরিচয় হলে কোনো বাধাই আর রুখতে পারে না। তাই জীবন যুদ্ধে কখনই থমকে
থাকা নয়, শুধুই এগিয়ে যাওয়া।
অরুনিমা স্বপ্ন দেখেন স্পোর্টস অ্যাকাডেমি খোলার। যেখানে তিনি দুস্থ আর প্রতিবন্ধীদের সব ধরনের সাহায্য
করে জীবনের পথে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাতে চান। দিতে চান নিজের মতো একটি নিজস্ব পরিচয় আর আত্মবিশ্বাস।
No comments