গুগল
গুগল
গুগল ইনকর্পোরেটেড (ইংরেজি: Google
Incorporated) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বহুজাতিক ইন্টারনেট এবং সফটওয়্যার কোম্পানী
এবং বিশেষভাবে তাদের গুগল সার্চ ইঞ্জিনের, অনলাইন বিজ্ঞাপন সেবা এবং ক্লাউড কম্পিউটিংএর
জন্য বিশ্বখ্যাত। এটি ইন্টারনেট ভিত্তিক বেশকিছু সেবা ও পণ্য উন্নয়ন এবং হোস্ট
করে। প্রাথমিকভাবে এটি "এডওয়ার্ডস" প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ আয়
করে। এর প্রধান কার্যালয় ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেইন ভিউ শহরে অবস্থিত। গুগলের মূলমন্ত্র হল "বিশ্বের
তথ্য সন্নিবেশিত করে তাকে সবার জন্য সহজলভ্য করে দেয়া"। গুগলের অপ্রাতিষ্ঠানিক মূলমন্ত্র হল "Don't be evil" (মন্দ হইয়ো না)। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন পিএইচডি ছাত্র ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা।
গুগল প্রথম ইনকর্পোরেট হয় প্রাইভেট কোম্পানী
হিসেবে ১৯৯৮ সালের ৪ই সেপ্টেম্বর এবং এর প্রাথমিক শেয়ার (আইপিও) ছাড়া হয় ২০০৪
সালের ১৯শে আগস্ট। সেই সময় ল্যারি পেইজ, সের্গেই ব্রিন এবং এরিক স্কমিট গুগলে ২০
(২০২৪ সাল পর্যন্ত) বছেরর জন্য একসাথে কাজ করতে একমত হন। ২০০৬ সালে, কোম্পানিটি মাউন্ট ভিউতে স্থানান্তরিত হয়।
যখন থেকে এটি ইনকর্পোরেশনে পরিবর্তিত হয় তখন
থেকেই এটি সবদিকে বাড়তে শুরু করে, শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিনই নয়। কোম্পানিটি
অনলাইন সেবা যেমন জিমেইল - ইমেইল সেবা, গুগল ডকস - অফিস সুইট এবং গুগল প্লাস -
সামাজিক নেটওয়ার্কিং সেবা প্রভৃতি প্রদান করে থাকে। গুগলের পণ্য ইন্টারনেট ছাড়াও
ডেস্কটপেও ব্যবহার হয় যেমন গুগল ক্রোম - ওয়েব ব্রাউজার, পিকাসা - ছবি সংগঠিত এবং সম্পাদন করার সফটওয়্যার এবং গুগল টক - ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং এপ্লিকেশন প্রভৃতি।
গুগল মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রয়েড এবং গুগল ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম যা শুধু
ব্রাউজার অপারেটিং সিস্টেম (বিশেষ ল্যাপটপ ক্রোমবুকে পাওয়া যায়)
পরিচালনা করে।
ইতিহাস
গুগলের আসল মূলপাতা ছিল একেবারে সাধারণ নকশার
কারণ কোম্পানির জনকেরা তখন এইচটিএমএল ভাষায় দক্ষ ছিলেন না
ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন
১৯৯৬ সালে গবেষণা প্রকল্প হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন পিএইচডি কোর্সের ছাত্র ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন এর কাজ শুরু করেন। ঐ সময়ের সার্চ ইন্জিনগুলো
ফলাফলকে বিন্যাস করত কত বার একটি বিষয়কে সার্চ ইন্জিন পাতায় এনেছে সেই ভিত্তিতে।
তাদের তত্ত্ব ছিল তখনকার কৌশলগুলোর চেয়ে নতুন কৌশলে কোনো একটা সার্চ ইঞ্জিন
বানানো,
যেটি
ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষন করে ফলাফল দেখায়, তাহলে আরো ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে। তারা একে পেজর্যাঙ্ক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এই পদ্ধতিতে একটি
ওয়েব সাইটের পাতাগুলো কতটুকু সম্পর্কযুক্ত (সার্চ টার্মের সাথে) এবং ঐ পাতাগুলো
কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা বিবেচিত হয় যা আসল সাইটের সাথে সংযুক্ত থাকে।
পেজ এবং ব্রিন শুরুতে নতুন সার্চ ইন্জিনের
নাম রাখে "ব্যাকরাব", কারণ এই ব্যবস্থায় সাইটের ব্যাকলিংকগুলো যাচাই করা হত ঐ সাইট কত গুরুত্বপূর্ন
তা নির্ধারণ করার জন্য। পরবর্তীতে তারা নাম পরির্বতন করে গুগল রাখে, যা আসলে ভুল বানানে লিখা "googol" থেকে এসেছে। এটি দিয়ে বোঝানো হত একটি
সংখ্যার পেছনে একশত শূন্য। এরপর তা নাম হিসেবে নির্বাচন করা হয় কারণ তারা সার্চ
ইঞ্জিনের বিশাল পরিমাণ তথ্য প্রদানেরব্যপারটিকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন। প্রথমত, গুগল স্ট্যানফোর্ড ইউনির্ভাসিটির ওয়েবসাইটের
অধীনে চলত যার ঠিকানা ছিল google.stanford.edu
এবং z.stanford.edu।
ডোমেইন নাম গুগল নিবন্ধিত করা হয় ১৫ই
সেপ্টেম্বর,
১৯৯৭ সালে এবং কর্পোরেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ৪ঠা
সেপ্টেম্বর,
১৯৯৮ সালে। এটি
চালানো হত তাদের এক বন্ধুর গ্যারেজ থেকে যার নাম ছিল সুজান ওজচিচকি)। তিনি ম্যানলো পার্ক, ক্যালিফোর্নিয়ার ক্রেইগ সিলভারস্টাইনে
থাকতেন। প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি ছিল স্ট্যানফোর্ডের ফেলো পিএইচডি ডিগ্রি
প্রাপ্ত একজন ছাত্র।
২০১১ সালের মে মাসে, প্রথমবারের মত এক মাসে গুগলে ইউনিক ভিজিটর এক
বিলিয়ন পার হয়। যা ছিল ২০১০ সালের মে মাসের থেকে ৮.৪ ভাগ
বেশি। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে, গুগল ঘোষণা করে এটি $৫০ বিলিয়ন বার্ষিক আয় করে ২০১২ সালে। যা গত বছরের চেয়ে ১২ বিলিয়ন বেশি।
১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন একটি প্রাইভেট
লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালের ১৯শে আগস্ট এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়।
সময়ের সাথে নিত্যনতুন পণ্য ও সেবা যোগ করে গুগল প্রতিনিয়ত নিজেদের আকার ও
উপযোগিতা বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। একই সাথে নতুন কোম্পানি কিনে নিজেদের সাথে
একীভূতকরণ,
ভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব ও বিজ্ঞাপন জগতে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ়ীকরণের
মাধ্যমে নিজেদের বহুমুখিতাকে সমৃদ্ধ করেছে। ফলে তথ্য খোঁজার পাশাপাশি বর্তমানে ইমেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ভিডিও শেয়ারিং, অফিস প্রোডাক্টিভিটি, প্রভৃতি বিষয়ে গুগলের সেবা রয়েছে।
অর্থায়ন,
১৯৯৮ এবং আইপিও, ২০০৪
গুগলের প্রথম উৎপাদন সার্ভার। গুগলের
সার্ভারগুলো কম মূল্যের হার্ডওয়ার দিয়ে তৈরী অব্যাহত রাখে।
গুগলের প্রথম অর্থায়ন করা হয় ১৯৯৮ সালের
আগষ্টে, এ্যান্ডি
ব্যাকওলশাইম $১০০,০০০ টাকা প্রদান করেন গুগল যৌথ মালিকানায়
যাবার পূর্বে। তিনি সান মাইক্রোসিস্টেম নামক প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে ব্রিন এবং পেজ যখন স্নাতক ছাত্র ছিলেন, তারা দেখেন যে সার্চ ইন্জিনটি তৈরী করতে
প্রচুর সময় লাগছিল এবং তাদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। তারা
সিদ্ধান্ত নিয়ে এক্সাইট সিইও জর্জ বেলের কাছে যান এবং তার কাছে $১ মিলিয়ন দামে বিক্রির প্রস্তাব করেন। তিনি
প্রস্তাবটি নাকছ করে দেন। পরে এক্সাইটের একজন মূলধন প্রদানকারী বিনোদ খোসলা এর সমালোচনা করেন এবং ব্রিন এবং পেজের সাথে $৭৫০,০০০ পর্যন্ত দরাদরি করেন। ১৯৯৯ সালের ৭ই জুন
একটি $২৫ মিলিয়নের অর্থায়ন ঘোষণা করা হয় যাতে প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে মূলধন
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্লাইনার
পারকিনস কওফিল্ড এবং বেয়ারস ও সিকোইয়া ক্যাপিটাল অর্ন্তভূক্ত ছিল।
গুগলের আইপিও ছাড়া হয় পাচঁ বছর পর ২০০৪
সালের ১৯শে আগষ্ট। এই সময়ের মধ্যে ল্যারি পেজ, সের্গেই ব্রিন এবং এরিক স্কমিডট একসাথে গুগলে
২০ বছর কাজ করার জন্য সম্মত হন। কোম্পানীটি ১৯,৬০৫,০৫২টি শেয়ার প্রতিটি $৮৫ বাজারে ছাড়ে। শেয়ারগুলো অনলাইন নিলাম ব্যবস্থায় বিক্রি
করা হয়। এই ব্যবস্থাটি তৈরী করেন মরগান ষ্টানলি এবং ক্রেডিট সুইস যারা চুক্তিটির
আন্ডাররাইটার ছিলেন। $১.৬৭ বিলিয়নের বিক্রয়ের ফলে গুগলের বাজার
মূলধন দাড়ায় ২৩ বিলিয়নেরও বেশি। ২০১৪ সালের
জানুয়ারি নাগাদ এর বাজার মূলধন বেড়ে দাড়ায় ৩৯৭ বিলিয়ন। প্রধান শেয়ারের প্রায় ২৭১ মিলিয়ন শেয়ার
গুগলের নিজস্ব নিয়ন্ত্রনে থাকে এবং অনেক গুগল কর্মীই এতে দ্রুত মিলিয়নিয়ার হয়ে
যায়। গুগলের আইপিও ছাড়ার পূর্বেই ইয়াহু! কিছু গুগলের শেয়ার পেয়েছিল।
পরবর্তীতে আইপিও ছাড়লে ইয়াহু! এতে লাভবান হয় ৮.৪ মিলিয়ন শেয়ার থেকে।
গুগল শেয়ার ছাড়ার পর ধারণা করা হয়েছিল
গুগলের কোম্পানী সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। যেহেতু কোম্পানীর নির্বাহীরা রাতারাতি
মিলিয়নিয়ার হয়ে যাবে। সেহেতু কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে আনার জন্য
শেয়ারহোল্ডারদের চাপ থাকবে বলে মনে করা হয়। এই প্রতিক্রিয়ার জন্য সহপ্রতিষ্ঠাতা
সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেজ শেয়ার হোল্ডারদের নিশ্চিত করেন যে কোম্পানির
সংস্কৃতি পরিবর্তন হবে না। ২০০৫ সালে দি
নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ অন্যান্য উৎসের খবরে মতামত দেয়া হয় যে গুগল তার
এন্টি-কর্পোরেট ও নো ইভল আদর্শ হারিয়ে ফেলেছে। কোম্পানির ব্যতিক্রম এই সংস্কৃতি ধরে রাখতে
গুগল একজন প্রধান কালচার অফিসার নিয়োগ করেন। তিনিই আবার মানব সম্পদের পরিচালকের
কাজ করেন। তার দ্বায়িত্ব হল কোম্পানি যে সত্যিকারের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি নিয়ে
গড়ে উঠেছিল তা বজায় রাখা। গুগল তার
প্রাক্তন কর্মীদের কাছ থেকে লিঙ্গ বৈষম্য ও বয়সের বৈষম্য করা নিয়ে বিতর্কিত
হয়েছিল। ২০১৩ সালে একটি শ্রেনীর
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত হাই-টেক
কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে যাতে গুগলও ছিল। এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল বিতর্কিত
"কোল্ড কল" অবস্থার জন্য। এর ফলে নিয়োগকৃত এই সব
কর্মীদের নো কোল্ড কল চুক্তির আওতায় নিয়ন্ত্রনে আনা হয়।
আইপিও ছাড়ার পর গুগলের শেয়ার কার্যক্রম ভাল
চলে। ২০০৭ সালের ৩১শে অক্টোবর প্রথম বারের মত শেয়ারের দাম দাড়ায় $৭০০। এর কারণ হিসেবে
প্রাথমিকভাবে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বিক্রয় এবং আয়ের বাজারকে ধরা হয়। শেয়ারের এই উর্ধগতি একক বিনিয়োগকারীর জন্য। কোম্পানিটি নাসডাক শেয়ার বাজারে টিকার
চিহ্ণের সাথে "GOOGL"
ও "GOOG"নামে এবং ফ্র্যাংকফুট স্টক বাজারে টিকার
চিহ্ন নিয়ে GGQ1
নামে
অর্ন্তভুক্ত হয়। ২০১৫ সালের চতুর্থ ভাগে এই সব টিকার চিহ্নগুলো এলফাবেট ইনককে
নির্দেশ করে যা গুগলের হোল্ডিং কোম্পানি।
১৯৯৯ সালের মার্চে, ক্যালিফোর্নিয়ার পালো অল্টোতে কোম্পানীটি
তাদের অফিস সরিয়ে নেয়,
যেখানে অনেক
প্রথম সারির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ শুরু করেছিল। পরবর্তী বছরে পেজ এবং ব্রিনের আপত্তি
সত্ত্বেও বিজ্ঞাপন-অর্থায়ন ভিত্তিক সার্চ ইন্জিনের সূচনা করা হয়। গুগল সার্চ কিওয়ার্ড ভিত্তিক বিজ্ঞাপন
বিক্রি শুরু করে। সার্চ পাতার দ্রুততা ও পরিষ্কার দৃষ্টি নন্দন
রাখার জন্য বিজ্ঞাপনগুলো লেখা ভিত্তিক রাখা হয়। কিওয়ার্ড বিক্রি করা হত নিলাম দর
এবং কতটি ক্লিক পড়ে তার উপর ভিত্তি করে, নিলাম শুরু হত পাঁচ সেন্ট ক্লিক প্রতি দরে।
কিওয়ার্ড ভিত্তিক বিজ্ঞাপন বিক্রির এই মডেল
প্রথমে Goto.com
থেকে আসে যা ঐ
ক্ষেত্রে প্রথম সারির ছিল। এটি আইডিয়াল্যাবের বিল গ্রস কর্তৃক তৈরী। যখন কোম্পানীটি তাদের নাম পরিবর্তন করে
ওভারচার সার্ভিসেস রাখে,
তখন এটি গুগলের
বিরুদ্ধে তাদের পে-পার-ক্লিক এবং নিলাম পদ্ধতির পেটেন্ট নকল করার অভিযোগ আনে।
পরবর্তীতে ওভারচার সার্ভিস ইয়াহু! কিনে নেয় এবং নাম পরিবর্তন করে ইয়াহু! সার্চ মার্কেটিং রাখে। মামলাটি কোর্টের বাইরে সমঝোতা করা হয়; গুগল তার কিছু সাধারণ শেয়ার ইয়াহু!
কোম্পানীকে প্রদান করে বিনিময়ে তারা লাইসেন্স পায় পদ্ধতিটি ব্যবহারের।
২০০১ সালে গুগল পেজর্যাঙ্কের জন্য পেটেন্ট
নেয়। পেটেন্টটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্ট্যানফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ করা হয় এবং লরেন্স পেজকে এর উদ্ভাবক হিসেবে দেখানো
হয়। ২০০৩ সালে,
প্রাতিষ্ঠানিক
কার্য বৃদ্ধির ফলে কোম্পানিটি একটি অফিস কমপ্লেক্স লিজ নেয় সিলিকন গ্রাফিক্স থেকে যেটির ঠিকানা ছিল ১৬০০ এম্পিথিয়েটার
পার্কওয়ে,
মাউন্টেন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়া। এই কমপ্লেক্সটি পরবর্তীতে গুগলপ্লেক্স হিসেবে
পরিচিত হয়। এটির অভ্যন্তরীন নকশা করেন ক্লিভ উইলকিনসন। তিন বছর পরে গুগল এই জায়গাটি কিনে নেয় $৩১৯ মিলিয়নে। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেই "গুগল"
তাদের নাম প্রতিদিনের ভাষায় যোগ করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলেমেরিয়াম-ওয়েবস্টার কলেজিয়েট ডিকশনারি এবং অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান একে একটি ক্রিয়া হিসেবে অভিধানে যোগ করে।
অসম্ভব জনপ্রিয়তা প্রাপ্ত গুগল ইন্জিনের
ব্যবহারকারীরা তাদের নিজেদেরকে "গুগলিষ্ট" হিসেবে ডাকা শুরু করে, এমনকি একে বিভিন্ন ধর্মের মত
"গুগলিজম" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গুগলের অনুসারিরা একটি অলাভজনক অনলাইন
প্রতিষ্ঠান পায় যা "দি চার্চ অব গুগল" একটি ওয়েবসাইট, যেখানে তারা উপাসনা করে এই বিশাল সার্চ ইন্জিনকে। দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস এই বিষয়টিকে "ইজ
গুগল গড?"
শিরোনামে আলোচনা
করে তাদের "মতামত" বিষয়শ্রেণীতে। ইন্টারনেটে অনেক
ব্লগ রয়েছে যেখানে গুগলকে কেন ঈশ্বরতুল্য তার কারণ উল্লেখ্য আছে।
২০১৩ পরবর্তী
গুগল নতুন কোম্পানী ক্যালিকো শুরু করার ঘোষণা দেয় ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে যা পরিচালিত হবে এ্যাপলের
চেয়ারম্যান আর্থার লেভিনসনের দ্বারা। দাপ্তরিক উন্মুক্ত ব্যাখায় বলা হয়
"স্বাস্থ্য এবং কল্যানভিত্তিক" কোম্পানিটির মূল দৃষ্টি থাকবে
"বৃদ্ধ ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের" প্রতি।
২০১৩ সেপ্টেম্বর নাগাদ গুগল ৭০টি অফিস প্রায়
৪০টিরও বেশি দেশে পরিচালনা করছে বলে জানা যায়। গুগল তার ১৫তম বার্ষিকী পালন করে সেপ্টেম্বর
২৭,
২০১৩ সালে যদিও
এটি আগে অন্য তারিখে দাপ্তরিক জন্মদিন পালন করেছে। কেন এটি তারা বেছে নিয়েছে তা পরিষ্কার নয়
এবং প্রতিযোগী সার্চ ইন্জিন ইয়াহু! সার্চের সাথে ২০০৫ সালে হওয়া একটি বিরোধকে
কারণ ধরা হচ্ছে।
২০১৩ সালেই এ্যালায়েন্স ফর এফোরডেবল
ইন্টারনেট (A4AI)
চালু করা হয়
এবং গুগল এই সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মিলিতরূপের একটি অংশ। এতে আরও আছে ফেসবুক, ইন্টেল এবং মাইক্রোসফট। স্যার
টিম বার্নাস-লি একে পরিচালিত করেন। এই সংস্থার উদ্দেশ্য হল
ইন্টারনেট ব্যবহারকে সকলের হাতের নাগালে আনা এবং বৈশ্বিক উন্নয়নকে প্রশ্বস্ত করা।
কারণ মাত্র ৩১% লোক অনলাইনে প্রবেশ করতে পারে পুরো পৃথিবী জুড়ে। গুগল ইন্টারনেট
প্রবেশের দাম কমাতে সাহায্য করবে যাতে তারা ইউএন ব্রডব্যান্ড কমিশনের বিশ্বব্যাপি
৫% মাসিক আয়ের লক্ষ্যের নিচে নেমে আসে।
২০১৩ সালের তৃতীয় ভাগের সামগ্রিক আয়ের
রিপোর্টে দেখা যায় ১৪.৮৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে যা আগের ভাগের চেয়ে ১২% বেশি।
গুগলের ইন্টারনেট ব্যবসায় এক্ষেত্রে যোগায় ১০.৮ বিলিয়ন যার সাথে আরো ছিল
ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপনে ক্লিকের হার।
২০১৩ সালের নভেম্বরে গুগল ঘোষণা করে নতুন ১
মিলিয়ন বর্গ ফিটের (৯৩০০০ বর্গ.মি) অফিস স্থাপনের যা হবে লন্ডনে এবং সম্ভাব্য
উন্মুক্তের সাল হিসেবে ২০১৬ সালকে ধরা হয়। নতুন অফিসে প্রায় ৪৫০০ চাকুরীজিবীর
কর্মসংস্থান হবে এবং ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সম্পদ কেনার ইতিহাস হয়ে
থাকবে।
২০১৪ সালের অক্টোবরে, ইন্টারব্রান্ড সূচক অনুযায়ী গুগল ছিল দ্বিতীয় সবোর্চ্চ
মূলবান ব্রান্ড পুরো পৃথিবীতে যার মূল্যমান ছিল প্রায় ১০৭.৪ বিলিয়ন ডলার। মিলওয়ার্ড ব্রাউনের অন্য একটি রির্পোটে
গুগলকে প্রথম স্থানে রাখা হয়।
পণ্য এবং সেবা
বিজ্ঞাপন
গুগলের ৯৯% আয় আসে বিজ্ঞাপন খাত থেকে। ২০০৬ অর্থবছরে, কোম্পানী জানায় ১০.৪৯২ বিলিয়ন বিজ্ঞাপন
থেকে এবং লাইসেন্স ও অন্যান্য খাত
থেকে ১১২ মিলিয়ন আয় হয়। গুগল অনলাইন
বিজ্ঞাপন বাজারে বিভিন্ন নতুন মাত্রা যোগ করে এবং অন্যান্যদের তুলনায় এগিয়ে
থাকে। ডাবলক্লিক কোম্পানীর প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুগল ব্যবহারকারীদের আগ্রহ অনুযায়ী
বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। গুগল এন্যালিটিকস এমন একটি প্রযুক্তি যা
ওয়েব সাইটের মালিকগন ব্যবহার করে থাকেন কোথায় এবং কিভাবে মানুষ তাদের ওয়েব সাইট
ব্যবহার করে থাকেন,
উদাহরণ সরূপ বলা
যায়,
কোন পৃষ্ঠার সকল
লিংকের মধ্যে কোনগুলোতে ক্লিক বেশি পড়েছে তা জানা যায় ক্লিক রেটের মাধ্যমে। গুগল দুটি পদ্ধতিতে তাদের বিজ্ঞাপনগুলো
বিভিন্ন থার্ড-পার্টি ওয়েব সাইটে রাখার সুযোগ দেয়। গুগলের এ্যডওয়ার্ডস এর
মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদানকারীরা কস্ট পার ক্লিক অথবা কস্ট পার ভিউ দুটির একটি
ব্যবহার করে গুগল নেটওর্য়াকে বিজ্ঞাপন দিতে পারে। আরেকটি পদ্ধতিতে, যা গুগল এ্যাডসেন্সনামে পরিচিত, ওয়েব সাইট মালিকরা তাদের ওয়েব সাইটে
বিজ্ঞাপনগুলো দেখাতে পারেন এবং তা থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন (প্রতিবার
বিজ্ঞাপনে ক্লিক পড়লে)।
এই প্রোগ্রামের একটি বড় অসুবিধা সেই সাথে
সমালোচনার বিষয় হল গুগলের ক্লিক ধোঁকাবাজি ধরতে না পারা যেমন যখন কোন ব্যক্তি বা
কোন স্বয়ংক্রিয় স্ক্রীপ্ট বিজ্ঞাপনে আগ্রহ ব্যতিত ক্লিক করবে এবং গুগল তার জন্য
বিজ্ঞাপন প্রদানকারীকে অর্থ দিবে। ২০০৬ সালের শিল্প সংবাদে দাবি করা হয় ক্লিকের
প্রায় ১৪-২০ ভাগই অবৈধ। অধিকন্তু, গুগলের সার্চ এর মধ্যে সার্চ বাদানুবাদের
কারণ হয়,
যার কারণ গুগলের
সার্চ বক্স কোন ওয়েব সাইটের বিষয়াদি খুজতে ব্যবহার করা হয়। খুব দ্রুতই খবর
প্রকাশ হয় যে যখন এই ধরনের সার্চ চালানো হয় তখন ফলাফল পৃষ্ঠায় প্রতিযোগী
কোম্পানীগুলোর বিজ্ঞাপন ভেসে ওঠে যা ব্যবহারকারীদের তাদের ওয়েব সাইটে আকৃষ্ট করে। ২০০৮ সালের জুনে গুগল ইয়াহুর সাথে বিজ্ঞাপন
চুক্তি স্বাক্ষর করে যার মাধ্যমে ইয়াহু গুগলের বিজ্ঞাপন গঠন করবে তার ওয়েব
সাইটে। দুটি কোম্পানীর মধ্যে মৈত্রী স্থাপন সম্ভব হয়নি মার্কিন বিচার বিভাগের
এন্টিট্রাস্ট আইনের কারণে। ফলে ২০০৮ সালে গুগল তার চুক্তি থেকে সরে আসে।
গুগল তাদের নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপন করতে
একটি ওয়েব সাইট ছাড়ে যার নাম ডেমো
স্লাম, এটি তৈরী করা
হয় গুগলের বিভিন্ন পণ্যের প্রযুক্তি ডেমো বা সাময়িকভাবে দেখানোর জন্য।
প্রতি সপ্তাহে দুটি দল প্রতিযোগিতা করে গুগলের প্রযুক্তিকে নতুনভাবে দেখানোর জন্য।
সার্চ ইঞ্জিন
"গুগল অনুসন্ধান" একটি ওয়েব ভিত্তিক
সার্চ ইঞ্জিন,
কোম্পানীর
সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবা। ২০০৯ সালের নভেম্বরে কমস্কোরের প্রকাশ করা একটি বাজার
জরিপে বলা হয় গুগল আমেরিকার বাজারে প্রধান সার্চ ইঞ্জিন যার বাজার অংশীদারী ছিল
৬৫.৬ শতাংশ। গুগল বিলিয়নেরও বেশি ওয়েব পাতার সূচি রাখে যাতে
ব্যবহারকারীরা যে তথ্য খুজছে তা পায়। এর জনপ্রিয়তা থাকা স্বত্তেও বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠান এর সমালোচনা করে। ২০০৩ সালে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস গুগলের সূচির বিরুদ্ধে
অভিযোগ আনে যে তারা ওয়েব পাতা এবং বিষয়বস্তু ক্যাশ করে রাখায় তা কপিরাইট লঙ্গন
করার সামিল। এই ঘটনায় (ফিল্ড বনাম গুগল এবং পার্কার বনাম
গুগল),
আমেরিকার নেভাদা
জেলা আদালত গুগলের পক্ষে রায় দেয়। অধিকন্তু, ২৬০০: দ্য হ্যাকার কোয়ার্টালী একটি শব্দের
তালিকা এনে অভিযোগ করে যে গুগল ইনস্টান্ট সেবা সেগুলো সার্চ করে না। গুগল ওয়াচ গুগলের পেজ র্যাংকিং
এ্যালগরিদমের সমালোচনা করে বলেছে এগুলো নতুন ওয়েব সাইটগুলোর সহায়ক নয় বরং পুরনো
প্রতিষ্ঠিত ওয়েব সাইটকেই গুরুত্ব দেয় এবং জোর দাবি করে যে গুগলের সাথে এনএসএ এবং
সিআইএর যোগাযোগ রয়েছে। সমালোচনা স্বত্তেও গুগল তার সেবা বাড়িয়ে
চলে যেমন ছবি সার্চ ইঞ্জিন,
গুগল নিউজ সার্চ, গুগল ম্যাপস এবং আরো অনেক। ২০০৬ সালের শুরুর
দিকে গুগল নতুন সেবা গুগল ভিডিও শুরু করে যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ভিডিও আপলোড, দেখতে এবং খুজঁতে পারবে। ২০০৯ সালে, গুগল ভিডিওতে আপলোড কমে আসে কারণ তারা
সার্চের প্রতি জোর দেয়। এমনকি গুগল ডেস্কটপের জন্য গুগল ডেস্কটপ তৈরী
করে যা দিয়ে যে কেউ তার নিজের ডেস্কটপে সার্চ চালাতে পারবেন। গুগল সার্চে
সম্প্রতি যে বিষয়টি যোগ হয়েছে তা হল ফ্রি প্যাটেন্ট এবং ট্রেডমার্ক সার্চ। গুগল
এবং ইউনাইটেড স্টেটস প্যাটেন্ট এ্যন্ড ট্রেডমার্ক অফিস অংশীদারিত্বের ফলে এই
সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
অন্য একটি বির্তকমূলক সার্চ সেবা হল গুগল
বুকস সেবা। কোম্পানীটি বিভিন্ন বইয়ের পাতা স্ক্যান করে আপলোড করে। এতে কিছু কিছু
বইয়ের পাতা সীমাবদ্ধ আকারে দেখানো হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরোটাই। ২০০৫ সালে, লেখক সমিতি যারা ৮০০০ আমেরিকান লেখকের হয়ে
কাজ করেন,
তারা নিউ ইয়র্ক
সিটি আদালতে গুগলের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে গুগল
পুনর্সম্পাদন করে এই সেবায় এতে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার লেখকদের বই খুবই সীমিত আকারে স্ক্যান করে
প্রকাশ করা হয়। অধিকন্তু, প্যারিস আদালত ২০০৯ সালের শেষের দিকে
"লা মার্টিনিয়ার" সম্পাদন করা কাজ গুগলের ডেটাবেস থেকে মুছে ফেলতে আদেশ
জারি করে। আমাজন ডট কমের সাথে প্রতিযোগীতা করতে গুগল নতুন বইগুলোর
ডিজিটাল সংস্করণ ছাড়ার পরিকল্পনা নেয়। ২০১০ সালের ২১
জুলাই, বিং সার্চ ইঞ্জিনকে টেক্কা দিতে, ছবির থাম্বনেইলে মাউস পয়েন্টার রাখলে বড়
হয় এমন একটি বৈশিষ্ট্য যোগ করে। ২০১০ সালেরই ২৩ জুলাই আরেকটি বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা
হয়,
বিভিন্ন ইংরেজি
শব্দের সংজ্ঞা সংবলিত পাতা যা সার্চ দিলে লিঙ্কগুলো উপরে দেখা যায়। সেবার মান আরো বাড়াতে, ২০১১ সালের মার্চে গুগল এ্যলগরিদম পরির্বতন করা হয়।
উৎপাদনশীল প্রোগ্রাম
জিমেইল গুগলের একটি ফ্রি ওয়েবমেইল সেবা, ১ এ্রপ্রিল ২০০৪ সালে এটি শুরু করা হয়েছিল
শুধুমাত্র আমন্ত্রন নির্ভর বেটা প্রোগ্রামহিসেবে। ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে জনগনের
কাছে উন্মুক্ত করা হয়। সেবাটি বেটা সংস্করন থেকে ৭ই জুলাই ২০০৯ সালে মূল প্রোগ্রামে আসে যখন এটার প্রায় ১৪৬
মিলিয়ন মাসিক ব্যবহারকারী ছিল। সেবাটি ছিল
প্রথম অনলাইন ইমেইল সেবা যার সাথে ছিল ১ গিগাবাইট সংরক্ষনের জায়গা। এটিই প্রথম
ইমেইল সেবা যেখানে ইন্টারনেট ফোরামের মত একই ইমেইলগুলোকে একসাথে রাখা হয়। সেবাটি এখন গুগলের অন্যান্য এ্যাপ্লিকেশনের
সাথে ভাগাভাগি করে ১৫ গিগাবাইট পর্যন্ত সংরক্ষনের জায়গা প্রদান করে যা পরে
২০ গিগাবাইট থেকে ১৬ টেরাবাইট পর্যন্ত বর্ধিত করা যায় যার জন্য প্রতি এক
গিগাবাইটে ০.২৫ ডলার প্রতি বছর ফি দিতে হয়।
জিমেইল আজাক্স ব্যবহার করে, যা কিনা একটি প্রোগ্রামিং কৌশল যেটি ব্যবহার
করে ব্রাউজারকে রিফ্রেশ করা ছাড়াই কাজ করা যায়। স্টিভ বালমার, লিজ ফিগারোআ , মার্ক রাসছ এবং গুগল ওয়াচের সম্পাদক গুগলের গোপনীয়তা নিয়ে সমালোচনা করেন।
কিন্তু গুগল দাবি করে একাউন্টের মালিক ছাড়া অন্য কেউ ইমেইলে কি পাঠানো হয়েছে তা
পড়ে না বা দেখে না। শুধুমাত্র মাত্র বিজ্ঞাপনের সুবিধার্থে এবং উন্নয়নে
সংশ্লিষ্টতা বজায় রাখা হয়।
২০০৪ সালে, গুগল মুক্ত উৎসের সফটওয়্যার প্রকল্প হোষ্টিং
করা শুরু করে যার নাম গুগল কোড। এটি ডেভেলপারদের ডেভেলপমেন্টের প্রোগ্রামগুলো
বিনা খরচে ডাউনলোড করার সুযোগ দেয়। গুগল ড্রাইভ, গুগলের আরেকটি উৎপাদনশীল পণ্য, ব্যবহারকারীদের ডকুমেন্ট তৈরী, সম্পাদনা এবং সমন্বয় করতে সহায়তা করে
অনলাইনে যা কিনা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতই। এই সেবাটিকে আসলে ডাকা হত রাইটলি নামে কিন্তু গুগল ৯ মার্চ ২০০৬ সালে একে
অর্জন করে এবং এটিও আমন্ত্রন নির্ভর করে ছাড়া হয়। কিনে নেয়ার পর ৬ই জুন গুগল পরীক্ষামূলক
স্প্রেডশীট সম্পাদনার প্রোগ্রাম তৈরী করে যা অক্টোবরের ১০ তারিখে গুগল ডকসের সাথে
সমন্বয় করা হয়।
গুগল ফর ওয়ার্ক হল একটি গুগলের সেবা যা গুগল পণ্যের
পরিবর্তনযোগ্য ব্যবসায়িক সংস্করন প্রদান করে ক্রেতাদের দেয়া ডোমেইন নাম ব্যবহার
করে। এটির মধ্যে আছে বেশকিছু ওয়েব এ্যাপ্লিকেশন যা গতানুগতিক অফিস প্যাকেজের মতই।
যেমন জিমেইল, হ্যাঙ্গআউটস, গুগল ক্যালেন্ডার, গুগল ড্রাইভ, গুগল ডকস, গুগল শীটস, স্লাইডস, গুগল গ্রুপস, গুগল নিউজ, গুগল প্লে, গুগল সাইটস এবং ভল্ট। এটি ছিল রাজেন সেথ, যিনি গুগলের একজন কর্মীর ভিশন বা ভবিষ্য
স্বপ্ন। তিনিই পরে ক্রোমবুকসের উন্নয়ন করেন।
যৌথ কারবার
এবং সংস্কৃতি
২০০৮ সালে পূর্বের সিইও, বর্তমানে গুগলের চেয়ারম্যান এরিখ স্কমিডট সঙ্গে আছেন সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেজ (বাম থেকে ডানে)
এরিখ স্কমিডট
ফরচুন পত্রিকায় প্রকাশিত কাজ করার সর্বোত্তম
কোম্পানীর তালিকায় গুগল ২০০৭, ২০০৮ এবং ২০১২ সালে প্রথম স্থান অধিকার করে। এছাড়া ২০০৯ এবং ২০১০ সালে চতুর্থ স্থান দখল
করে। ২০১০ সালে ইউনিভার্সাম কমিউনিকেশনস ট্যালেন্ট
এট্রাকশান সূচকে বিশ্বের সকল কোম্পানীর মধ্যে গুগল মনোনয়ন পায় সবচেয়ে আকর্ষনীয়
চাকুরীদাতা হিসেবে স্নাতকধারী ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে। গুগলের কর্পোরেট নীতিতে আছে "তুমি কোন
খারাপ কাজ ছাড়াই টাকা কামাতে পারো", "কোন স্যুট ছাড়াই তুমি গুরুতর হতে পারো"
এবং "কাজ হতে হবে প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ন এবং প্রতিদ্ধন্ধিতা হতে হবে
মজাদার" ইত্যাদি প্রধান সারির আদর্শ রয়েছে।
কর্মী
২০১৩ সালে অধীনস্থ মোটরোলা কোম্পানীসহ সব
মিলিয়ে গুগলে ৪৭,৭৫৬ জন কর্মী রয়েছে, যাদের মধ্যে ১০,০০০ হাজারেরও বেশি সফটওয়্যার ডেভেলপারগন
রয়েছে ৪০টি অফিসে। ২০০৪ সালে কোম্পানীটি প্রথম শেয়ার বাজারে
আসার পর এর প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেজ এবং সিইও এরিখ স্কমিডট
অনুরোধ করেন তাদের মূল বেতন যাতে এক ডলারে নামিয়ে আনা হয়। পরবর্তী সময়েও কোম্পানীর
তরফ থেকে তাদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারটি মানা করা হয়। কারণ প্রাথমিকভাবে তাদের মূল
বেতন আসত গুগলের শেয়ার থেকে। ২০০৪ সালের আগেই স্কমিডট $২৫০,০০০ আয় করেন প্রতি বছর এবং পেজ ও ব্রিন
প্রত্যেকেই বার্ষিক বেতন পেতেন $১৫০,০০০।
২০০৭ এবং ২০০৮ সালের শুরুর দিকে, বেশ কিছু উচ্চ নির্বাহী গুগল ছেড়ে যান। ২০০৭
সালের অক্টোবরে ইউটিউবের প্রাক্তন প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা গিডিওন ইউ ও উচ্চ পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বেন্জামিন লিং ফেসবুকে যোগ দেন। ২০০৮ সালের মার্চে শেরিল
স্যান্ডবার্গ তারপর বৈশ্বিক অনলাইন বিক্রয় এবং পরিচালনার ভাইস প্রেসিডেন্ট
ফেসবুকে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। একই সময়ে
ব্র্যান্ড বিজ্ঞাপনের প্রধান অ্যাশ ইডিফ্রাউই নেটশপসে যোগ দেন। ২০১১ সালের, ৪ এপ্রিল ল্যারি পেজ সিইও এবং এরিখ স্কমিডট
নির্বাহী চেয়ারম্যান হন। ২০১২ সালের জুলাইয়ে গুগলের প্রথম নারী কর্মী
মারিসা মেয়ার ইয়াহুর সিইও হতে গুগল ছেড়ে যান।
নতুন কর্মীদের "নুগলারস" ডাকা হয়
এবং কাজের প্রথম শুক্রবারে প্রপেলার বিনি নামক টুপি পরিধান করতে দেয়া হয়।
প্রেষণার কৌশল হিসেবে গুগল তাদের নীতি "উদ্ভাবন
সময়" ব্যবহার করত। যেখানে গুগল ইন্জিনিয়ারগনদের উৎসাহ দেয়া হত যেন তারা
তাদের কাজের ২০% সময় ঐসব প্রকল্প কাজ করেন যে সকল প্রকল্পে তারা আগ্রহবোধ করেন।
গুগলের কিছু নতুন সেবা যেমন জিমেইল, গুগল সংবাদ, অরকুট এবং এডসেন্স এই নীতির কারণে উদ্ভাবিত
হয়েছিল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলোচনায়
মারিসা মেয়ার জানান তাদের ২০০৫ সালের দ্বিতীয়ভাগে নতুন উদ্ভাবিত পণ্যগুলোর
অর্ধেকই এসেছে এই "উদ্ভাবন সময়" থেকে
অন্যান্য পণ্য
মটো এক্স
২০১৩ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
অনুষ্ঠিত ডি১১ সম্মেলনে,
মটোরোলা সিইও ডেনিস
শুটিং ঘোষণা করেন একটি নতুন মোবাইল ডিভাইস তার কোম্পানী দ্বারা নির্মিত হবে। এখানে
উল্লেখ্য মটোরোলা সম্পূর্ণরূপে গুগল মালিকানাধীন । টেক্সাসের ৫০০,০০০ বর্গফুটের বিশাল এক জায়গাতে নতুন মোবাইল
ডিভাইস তৈরি হবে। পূর্বে এই জায়গা নকিয়া কোম্পানী দ্বারা ব্যবহৃত হতো । এখানে
২০০০ জনের চাকরি হবে।
No comments