নোবেল পুরস্কার
নোবেল পুরস্কার
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার (সুয়েডীয়: Nobelpriset নোবেল্প্রীসেৎ) প্রবর্তিত হয়। ঐ বৎসর থেকে সারা পৃথিবীর
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল এবং অনন্য সাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক তুলনারহিত কর্মকাণ্ডের
জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। মোট ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার
প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হল: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি। নোবেল পুরস্কারকে এ সকল ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা
করা হয়। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদেরকে ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়।
সুয়েডীয় বিজ্ঞানী আলফ্রেদ নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল-এর মর্মানুসারে নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা
হয়। নোবেল মৃত্যুর পূর্বে উইলের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করে যান।
শুধুমাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় অসলো, নরওয়ে থেকে। বাকি ক্ষেত্রে স্টকহোম, সুইডেনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অর্থনীতি ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে ১৯০১ সাল থেকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু
হয়েছে ১৯৬৯ সালে। আলফ্রেদ নোবেল তার উইলে অর্থনীতির কথা
উল্লেখ করেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত পুরস্কার
প্রদান বন্ধ ছিল। প্রত্যেক বছর পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেক একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদ ও নোবেল ফাউন্ডেশন কর্তৃক কিছু পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। ২০১২
খ্রিস্টাব্দে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৮০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনা। নোবেল পুরস্কার মৃত
কাউকে দেয়া হয় না। লরিয়েটকে অবশ্যই পুরস্কার প্রদানের সময় জীবিত থাকতে হবে। কিন্তু এর কিছু ব্যতিক্রম আছে। খুব বেশি
অবদান এর জন্য মরনত্তোর পুরস্কার দেয়া হয়।
ইতিহাস
দ্য মার্চেন্ট অফ ডেথ ইজ ডেডশিরোনামে ফরাসি সংবাদপত্রে আলফ্রেড নোবেল তার
নিজের মৃত্যুবিষয়ক সংবাদ পাঠের পর বিস্মিত হয়েছিলেন।
আলফ্রেড নোবেল , ২১ অক্টোবর ১৮৩৩ সালে সুইডেনের স্টকহোমে একটি প্রকৌশল পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি
একাধারে রসায়নবিদ, প্রকৌশলী ও একজনউদ্ভাবক ছিলেন। ১৮৯৪ সালে তিনি একটি বফর লোহা ও
ইস্পাত কারখানা ক্রয় করেন,
যা পরবর্তীতে
একটি অন্যতম অস্ত্র তৈরির কারখানায় পরিনত করেন। তিনি ব্যালিস্টিক উদ্ভাবন করেন, যা সারা বিশ্বব্যাপী ধোঁয়াবিহীন সামরিক বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাঁর ৩৫৫ টি উদ্ভাবনের
মাধ্যমে তিনি জীবদ্দশায় প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হন যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ
যোগ্য ছিল ডিনামাইট।
১৮৮৮ সালে তিনি মৃতদের তালিকা দেখে বিস্মত হন, যা একটি ফরাসি পত্রিকায় এ মার্চেন্ট অব ডেথ হু ডেড প্রকাশিত হয়। যেহেতু নোবেলের ভাই লুডভিগ
মারা যায়,
এই নিবন্ধটি
তাকে ভাবিয়ে তোলে এবং খুব সহজেই বুঝতে পারেন যে ইতিহাসে তিনি কিভাবে স্মরণীয় হতে
চান। যা তাকে তার উইলটি পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করে। ১০ ডিসেম্বর ১৮৯৬ সালেআলফ্রেদ নোবেল তার নিজ গ্রাম স্যান রিমো, ইতালিতে মৃত্যু বরন করেন। সেই সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩
বছর।
নোবেল তার জীবদ্দশায় অনেক গুলো উইল লিখে
গিয়েছিলেন। সর্বশেষটা লেখা হয়েছিল তার মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে ২৭ নভেম্বর ১৮৯৫
সালে প্যারিসে অবস্থিত সুইডিশ-নরওয়ে ক্লাবে। বিস্ময় ছড়িয়ে দিতে, নোবেল তার সর্বশেষ উইলে উল্লেখ করেন যে তার সকল
সম্পদ পুরস্কার আকারে দেয়া হবে যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন। নোবেল তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ
ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন।২৬ এপ্রিল ১৮৯৭ এর আগ
পর্যন্ত সন্দেহ প্রবনতার জন্য নরওয়ে থেকে এই উইল অনুমোদন করা হয় নি। নোবেলের উইলের সমন্বয়কারী রগনার সোলম্যান ও রুডলফ
লিলজেকুইস্ট নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। যার কাজ তার সম্পদের রক্ষনাবেক্ষন ও নোবেল
পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়জন করা।
১৮৯৭ সালে নোবেলের উইল অনুমোদন হবার সাথে সাথেই নোবেল পুরস্কার
প্রদানের জন্য নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি নামক একটি সংস্থা তৈরি করা হয়। অতি শীঘ্রই
নোবেল পুরস্কার দেবার অন্যান্য সংস্থাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ৭
জুন ক্যারোলিংস্কা
ইনিস্টিটিউট, ৯ জুন সুইডিশ একাডেমী এবং ১১ জুন রাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান
একাডেমি। নোবেল ফাউন্ডেশন কিভাবে নোবেল পুরস্কার দেয়া
হয় তার একটি নীতিমালায় পৌছায় এবং ১৯০০ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন নতুনভাবে একটি বিধি
তৈরি করে যা রাজা অস্কার কর্তৃক জারি করা হয়। ১৯০৫ সালে সুইডেন ও নরওয়ের মধ্যে বন্ধন বিলুপ্ত হয়। তার পর থেকে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি শুধু মাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এবং সুইডেনের প্রতিষ্ঠানগুলো
অন্যান্য পুরস্কার গুলো প্রদানের দায়িত্ব পায়।
আলফ্রেড নোবেলের উইল
সুইডেনের রসায়নবিদ ও শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুসারে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেছিলেন, যার মাধ্যমে তার প্রচুর আয় হয়, আর এই আয়ের অর্থ দ্বারাই তিনি পুরস্কার
প্রদানের কথা বলে যান। জীবদ্দশায় নোবেল অনেকগুলো উইল লিখেছিলেন, এর মধ্যে সর্বশেষটি লিখেন তার মৃত্যুর মাত্র
এক বছর আগে নভেম্বর ২৭, ১৮৯৫ তারিখে। নোবেলের উদ্ভাবনটি ছিল অনেকাংশেই
একটি বিস্ফোরক যা প্রভূত ক্ষতির কারণ হতে পারত। তাই যুদ্ধক্ষেত্রে এই ডিনামাইটের
ব্যবহার তাঁকে শঙ্কিত করে তোলে। নোবেল পাঁচটি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়ার জন্য তার
মোট সম্পত্তির শতকরা ৯৪ ভাগ দান করে যান। এর মোট পরিমাণ ৩১ মিলিয়নএসইকে (৩.৪ মিলিয়ন ইউরো, ৪.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
"The
whole of my remaining realizable estate shall be dealt with in the following
way:
The capital shall be invested by my
executors in safe securities and shall constitute a fund, the interest on which
shall be annually distributed in the form of prizes to those who, during the
preceding year, shall have conferred the greatest benefit on mankind. The said
interest shall be divided into five equal parts, which shall be apportioned as
follows: one part to the person who shall have made the most important
discovery or invention within the field of physics; one part to the person who
shall have made the most important chemical discovery or improvement; one part
to the person who shall have made the most important discovery within the
domain of physiology or medicine; one part to the person who shall have
produced in the field of literature the most outstanding work of an idealistic
tendency; and one part to the person who shall have done the most or the best work
for fraternity among nations, for the abolition or reduction of standing armies
and for the holding and promotion of peace congresses.
The prizes for physics and chemistry shall
be awarded by the Swedish Academy of Sciences; that for physiological or medical
works by the Caroline Institute in Stockholm; that for literature by the
Academy in Stockholm; and that for champions of peace by a committee of five
persons to be elected by the Norwegian Storting. It is my express wish that in
awarding the prizes no consideration whatever shall be given to the nationality
of the candidates, so that the most worthy shall receive the prize, whether he
be Scandinavian or not."
— আলফ্রেদ নোবেল
যদিও আলফ্রেদ নোবেল এই পুরস্কারের প্রচলন
করেছেন,
তথাপি তিনি এর
কার্যক্রম দেখে যেতে পারেননি। কারণ তার পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ ছিল না। এছাড়াও
অন্যান্য বেশ কিছু কারণে নোবেল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় কিছুটা দেরী হয়। প্রথম নোবেল
পুরস্কার দেয়া হয় ১৯০১ সালের ডিসেম্বর ১০ তারিখে।
প্রথম পুরস্কার
যখন নোবেল ফাউন্ডেশন ও তার নীতিমালাগুলো চুড়ান্ত হল তখন থেকেই নোবেল কমিটি প্রথম পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করা
শুরু করে। পরবর্তীতে তারা প্রাথমিক নির্বাচিত প্রার্থীদের একটি তালিকাও পুরস্কার
প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে দেয়। প্রকৃতপক্ষে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি জরজেন লভল্যান্ড, জর্ন
স্টার্ন জর্নসন এবং জোহানিজ স্টিনের মত বিখ্যাত ব্যক্তিদের নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রদানের জন্য নিয়োগ দেয়। সেই কমিটি বিখ্যাত দুই জনকে নোবেল শান্তি
পুরস্কার প্রদান করে যারা ১৯ শতকের শেষের দিকে শান্তি আন্দোলনকে বেগবান করেছিল.
তারা ছিলেন আন্ত-সংসদীয় ইউনিয়নের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফেদ্রিক পাসি ও রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ডুনান্ট। নোবেল কমিটির পদার্থের পুরস্কারের জন্য
মনোনিতের তালিকায় ছিলেন এক্স রশ্মি আবিষ্কারের জন্য ভিলহেল্ম কনরাড রন্টগেন এবং ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে কাজ করার জন্য ফিলিপ লেনার্ড। পরে বিজ্ঞান একাডেমী রনজেনকে নির্বাচিত করে। ১৯ শতকের শেষ দশকে অনেক রসায়নবিদ
উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাই রসায়নে পুরস্কার দেবার ক্ষেত্রে একাডেমি এতজন
বিজ্ঞানীর মধ্যে কাকে পুরস্কৃত করা যায় তা নিয়ে সামান্য সিদ্ধান্তহীনতায়
ভোগেন।একাডেমী ২০টি মনোনয়ন পায় তার মধ্যে ১১টিকেই ছিল ভন হফের নাম। রাসায়নিক তাপগতিবিদ্যা নিয়ে গবেষনা করার
জন্য তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হন।
সুইডিশ একাডেমি সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে কবি সূলি প্রুধমকে। লেখক, কবি ও সাহিত্য সমালোচকদের ৪২ জনের একটি দল এই
সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে যারা এর জন্য লিও টলস্তয়কে প্রত্যাশা করছিল। বার্টন ফেল্ডম্যানের মত অনেকেই এই পুরস্কারের
সমালোচনা করেছিল কারণ তারা প্রুধমকে মধ্যমসারির কবি মনে করত। ফেল্ডম্যানের
ব্যখ্যানুযায়ী একাডেমীর অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন ভিক্টরিয়ান সাহিত্যের ভক্ত তাই
তারা সেরকম একজন কবিকেই বেছে নিয়েছেন। চিকিসায় প্রথম নোবেল পুরস্কার পান জার্মান চিকিৎসক ও অনুপ্রাণবিজ্ঞানী এমিলি ভন বেরিংকে। ১৮৯০ এর দশকে তিনি ডিপথেরিয়া প্রতিরোধক তৈরি করেন যা আজ পর্যন্ত প্রতি বছর
হাজার লোকের জীবন রক্ষা করে চলেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
মুল নিবন্ধ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
১৯৩৮ ও ১৯৩৯ সালে এডলফ হিটলার জার্মানির তিন জন পুরস্কার প্রাপ্তকে (রিচার্ড কুন, গার্হার্ড ডোমাগ ও এডলফ ফ্রেদরিক জোহান বুতেন্ড)
তাদের পুরস্কার
নেয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। পরবর্তীতে তাদের সকলেই পদক ও সনদ গ্রহণ করতে
পরেছিল। যদিও সুইডেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ
ভূমিকায় ছিল তারপরও সে সময় নোবেল পুরস্কার অনিয়মিতভাবে দেয়া হয়েছিল। ১৯৩৯
সালে শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। নরওয়েরউপর জার্মানির অন্যায্য অধিকারের জন্য এই ক্ষেত্রে ১৯৪০-৪২
সাল পর্যন্ত কোন পুরস্কার প্রদান করা হয় নি। এই বছরগুলোতে সাহিত্য ও শান্তি ছাড়া বাকি সব বিষয়গুলোতে পুরস্কার প্রদান
করা হয়।
নরওয়ে দখল থাকা অবস্থায়, নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির তিনজন সদস্যকে
নির্বাসনে পাঠানো হয়। বাকি সদস্য এই নির্যাতন থেকে তখনই মুক্তি পায় যখন নোবেল
ফাউন্ডেশন এই বিবৃতি দেয় যে অসলোতে গঠনকৃত কমিটিসুইডেনের আওতাধীন। সেই সকল সদস্যরা কমিটির কার্যক্রম
সচল রেখেছিল যদিও কোন পুরস্কার প্রদান করা হয় নি। ১৯৪৪ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন তিন
নির্বাসিত সদস্যসহ নিশ্চিত করে যে, পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন নেয়া হয়েছিল এবং
আবারও পুরস্কার প্রদান করা যেতে পারে।
অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান
১৯৬৮ সালে সুইডিশ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ৩০০ বছর পূর্তিতে নোবেল ফাউন্ডেশনকে একটি
বিরাট অঙ্কের অর্থ দান করে। যা নোবেলের সম্মান রক্ষার্থে একটি নতুন পুরস্কার প্রদান
করার কাজে ব্যবহৃত হবে। তার ঠিক পরের বছরে অর্থনীতিতে প্রথমবারের মত নোবেল পুরস্কার প্রদান করা
হয়। অর্থনীতিতে পুরস্কার মনোনিত করার দায়িত্ব পড়েরাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান
একাডেমির উপর।
জান টিনবার্গেন ও রাঙ্গার ফ্রিস হল অর্থনীতিতে প্রথম নোবেল বিজয়ী। অর্থনৈতিক পদ্ধতিসমুহে
তাদের গতি তত্ত্ব প্রয়োগ করা ও উন্নতি করার জন্য তাদের এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। যদিও নোবেল পুরস্কার নয়, তথাপিও অন্যান্য পুরস্কারের সাথে এটি শনাক্ত
করা হয় এবং সুইডিশ নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্য পুরস্কার প্রাপ্তদের
সাথে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
পুরস্কৃত হবার
পদ্ধতি
অন্যান্য পুরস্কারের তুলনায় নোবেল
পুরস্কারের মনোনয়ন ও নির্বাচন পদ্ধতি বেশ দীর্ঘ এবং কঠোর। এই কারণেই নোবেল
পুরস্কার পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারের মর্যাদা পেয়েছে।
২০০৯ সালে রসায়নে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা
করছেন রাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান
একাডেমির স্থায়ী সচিব গানার ওকুইস্ট
২০০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর
নাম ঘোষণা করছেন পিটার এঙ্গল্যান্ড, সুইডেন,
ইংরেজি এবং জার্মান
মনোনয়ন
নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন গ্রহণের জন্য
নির্দিষ্ট মনোনয়নপত্র রয়েছে। সমগ্র বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ৩০০০ জনকে এই মনোনয়নপত্র
দেয়া হয় যাতে তারা তা পূরণ করে পুরস্কারের আবেদন করতে পারে। নোবেল শান্তি
পুরস্কার নির্বাচনের জন্য এমন সব ব্যক্তিদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয় যারা এ বিষয়ে
বিশেষ কর্তৃত্বের দাবীদার। যে বছর পুরস্কার প্রদারন করা হবে তার ৩১ শে জানুয়ারী
মনোনয়ন পত্র প্রদানের শেষ তারিখ। নোবেল কমিটি তাদের মধ্যে সাম্ভব্য ৩০০ জনকে
মনোনীত করে। মনোনীতদের নাম প্রকাশ করা হয় না এমনকি
তাদেরকে জানানোও হয় না যে তারা মনোনীত হয়েছেন। মনোনয়নের এসব নথি পুরস্কার
প্রদান থেকে ৫০ বছরের জন্য সংরক্ষন করা হয়।
নির্বাচন
তারপর নোবেল কমিটি সম্পর্কিত বিষয়সমুহের
বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে
বাছাইকৃত প্রার্থীদের তালিকাসহ এই প্রতিবেদনটি নোবেল পুরস্কার প্রদানের
সংস্থাগুলোকে পাঠানো হয়। সংস্থাগুলোকে আধিক্য ভোটের মাধ্যমে
প্রত্যেকটি বিষয়ে বিজয়ী নির্বাচিত করতে হয়। ভোটের ঠিক পরপরই তাদের সিদ্ধান্ত
জানিয়ে দেয়া হয়। একটি পুরস্কার সর্বোচ্চ তিনজন এবং দুটি ভিন্ন
কাজের জন্য দেয়া যায়। নোবেল শান্তি পুরস্কার যে কোন সংস্থাকে প্রদান করা যায়
তাছাড়া সকল পুরস্কার শুধু মাত্র জীবন্ত ব্যক্তিকে দেয়া হয়ে থাকে। যদি শান্তি পুরস্কার দেয়া না হয় তবে তার
অর্থ বিজ্ঞানের অন্যান্য পুরস্কারে সমান ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়। যা এযাবতকালে ১৯
বার ঘটেছে।
মরোনোত্তর পুরস্কার
যদিও মৃত্যু পরবর্তী মনোনয়ন অনুমোদিত নয়, তথাপিও যদি প্রার্থীর মৃত্যু মনোনয়ন প্রদান
ও নোবেল কমিটির পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহনের মধ্যবর্তী সময়ে হলে তবে তা
নির্বাচিত হবার যোগ্য হবে। ইতিহাসে এমনটি দুইবার ঘটেছে: ১৯৩১ সালে সাহিত্যে এরিক
এক্সেল কার্লফেল্ড এবং ১৯৬১ সালে শান্তিতে জাতিসংঘের মহাসচিব ড্যাগ হেমার্শেল্ড। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এমনটি ভাবা হত যে অক্টোবরের
ঘোষণা পর্যন্ত বিজয়ী বেচে থাকবেন। উইলিয়াম ভিক্রী নামক একজন নোবেল বিজয়ী ১৯৯৬ সালে পুরস্কার (অর্থনীতিতে) ঘোষনার পর কিন্তু প্রদানের আগে মারা যান। ৩ অক্টোবর ২০১১ চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়; তদ্যাবধি কমিটি জানতো না যে বিজয়ীদের একজন রালফ স্টেইনম্যান তিন দিন আগে মারা গেছেন। কমিটিতে রালফ স্টেইনম্যানের পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক চলছিল কারণ মরোনোত্তর
পুরস্কার নিয়মের পরিপন্থী। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত অক্ষুন্ন রাখার হয়।
পুরস্কারের
ক্ষেত্রসমূহ
পদক
|
বিষয়
|
বৈশিষ্ট্যসমূহ
|
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল
পুরস্কার
|
রাজকীয়
সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমি (Kungliga
Vetenskapsakademien ভেতেন্স্কাপ্স্আকাদেমিয়েন) কর্তৃক নির্ধারিত। "পদার্থবিজ্ঞানের
ক্ষেত্রে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করবেন তাকে এই পুরস্কার
দেয়া হবে।"
|
|
রসায়নে নোবেল পুরস্কার
|
রাজকীয়
সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত। "যিনি রসায়নের
ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উন্নয়ন করবেন তাকে এই পুরস্কার
দেয়া হবে।"
|
|
চিকিৎসাবিজ্ঞানে
নোবেল বিজয়ীদের তালিকা
|
কারোলিন্স্কা সমিতি (Karolinska Institutet কারোলিন্স্কা ইন্স্তিতেৎ) কর্তৃক নির্ধারিত। "যিনি চিকিৎসা অথবা
জীব বিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করবেন তাকে এই পুরস্কার দেয়া
হবে।".
|
|
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
|
সুয়েডীয় একাডেমি (Svenska Akademien স্ভেন্স্কা আকাদেমিয়েন) কর্তৃক নির্ধারিত। "যিনি সাহিত্যের
জগতে সবচেয়ে বিশিষ্ট রচনাটি সৃষ্টি করবেন যা অবশ্যই কোন আদর্শের জন্ম বা লালন
করবে তাকে এই পুরস্কার দেয়া "
|
|
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার
|
নরওয়েজীয় নোবেল সমিতি কর্তৃক
নির্ধারিত। "যিনি জাতিসমূহের বন্ধুত্ব রক্ষা এবং বৃদ্ধি, যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত
সেনাবাহিনীর অপসারণ বা হ্রাস এবং শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণে সবচেয়ে বেশী
ভূমিকা রাখবেন তাকে এই পুরস্কার দেয়া "
|
|
অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার
|
এই পুরস্কারটিকে মূলত The Sveriges Riksbank Prize in Economic Sciences in Memory of
Alfred Nobel নামে ডাকা হয়। এটি প্রদান করার ব্যাপারে
আলফ্রেদ নোবেল তার উইলে কিছু বলে যাননি বরং সুইডেনের
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর প্রচলন করে। রাজকীয়
সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত।
|
পুরস্কার
প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা
নোবেল বিজয়ীরা পুরস্কার স্বরূপ একটি সুদৃশ
ডিপ্লোমা, স্বর্ণপদক ও নগদ অর্থ পেয়ে থাকেন। এখানে
রসায়নে নোবেল বিজয়ী ফ্রিজ হাবারের ডিপ্লোমা দেখানো হয়েছে
পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে যে
প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োজিত তারা সবাই ঠিক অক্টোবর মাসে লরিয়েটদের নাম ঘোষণা করে। ঘোষণার পর ১০ ডিসেম্বর তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে পদক প্রদান করা হয়।
এই দিনটি আলফ্রেদ নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকী।
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান
পূর্বে নরওয়েজীয় নোবেল সমিতি (১৯০৫ - ১৯৪৬) এবং অসলো
বিশ্ববিদ্যালয়ের আউলা-তে (অডিটোরিয়াম) (১৯৪৭ - ১৯৯০)
অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে অসলো সিটি হলে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছাড়া অন্য
পুরস্কারগুলো প্রদান করা হয় স্টকহোম কনসার্ট হলে।
প্রতি বছর একই বিষয়ে সর্বোচ্চ তিনজনকে
পুরস্কার দেয়া যায়। এই লরিয়েটদের প্রত্যেককে দেয়া হয়; একটি স্বর্ণপদক, একটি ডিপ্লোমা, সুইডেনের নাগরিকত্ব এবং একটি মোটা অঙ্কের
অর্থ। বর্তমানে এই অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১০ মিলিয়ন সুয়েডীয ক্রোনার (১ মিলিয়ন ইউরোর সামান্য বেশি/ ১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।এই অর্থ প্রদানের মূল কারণ এই যে, লরিয়েটরা যেন পুরস্কার পাবার পর তাদের আরো
উচ্চতর গবেষণা চালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু বর্তমানে যে সময় নোবেল পুরস্কার প্রদান
করা হয় সে সময় দেখা যায় অধিকাংশ লরিয়েটই অবসর জীবন যাপন করছেন।
১৯০২ সাল থেকে সুইডেনের রাজা স্টকহোমে পুরস্কার বিতরণ করে আসছেন। প্রথম
বছর সুইডেনের রাজা ছিলেন রাজা ২য়অস্কার; তিনি এতো মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার বিদেশীদের
হাতে তুলে দেয়ার বিরোধী ছিলেন। এজন্য তিনি পু্রষ্কার প্রদানে সম্মত হননি।
পরবর্তীতে অবশ্য জনপ্রিয়তা রক্ষার জন্য এবং সুইডেনের সম্মান রক্ষার খাতিরেই তাঁকে
মত পরিবর্তন করতে হয়েছে।
১৯০৪ সালে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি গঠিত হয়। এর আগে নরওয়ের রাষ্ট্রপতি নোবেল
শান্তি পুরস্কার প্রদানের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতার দায়িত্ব পালন করতেন। গঠনের পর
কমিটির ৫ জন সদস্য শান্তি পুরস্কার দেবার জন্য গবেষণামূলক কার্যক্রমের দায়িত্ব
পালন করে। তাঁদেরকে নরওয়েজীয় আইনসভা মনোনয়ন দেয়, তথাপি তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং কারো কাছে
জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। নরওয়ের আইনসভার সদস্যরা এই কমিটিতে অংশ নিতে পারেন না।
উল্লেখযোগ্য
নোবেল বিজয়ীবৃন্দ
মেরি কুরি, ইতিহাসে দুইবার করে নোবেল বিজয়ী চারজনের
একজন
নোবেল পুরস্কার প্রদানের ইতিহাসে মাত্র চারজন
ব্যক্তি দুইবার নোবেল বিজয়ের সম্মান লাভ করেছেন। এরা হলেন:
·
মেরি কুরি
·
পদার্থবিজ্ঞান: ১৯০৩ (তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার)
·
রসায়ন: ১৯১১ (বিশুদ্ধ রেডিয়াম পৃথকীকরণ)
·
লিনাস পাউলিং
·
রসায়ন: ১৯৫৪ (অরবিটাল সংকরণ তত্ত্ব)
·
শান্তি: ১৯৬২ (নিউক্লিয় শক্তির পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ আইনের বাস্তবায়নের জন্য
প্রচেষ্টা)
·
জন বারডিন
·
পদার্থবিজ্ঞান: ১৯৫৬ (ট্রানসিস্টর আবিষ্কার)
·
পদার্থবিজ্ঞান: ১৯৬২ (অতিপরিবাহিতার তত্ত্ব)
·
ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার
·
রসায়ন: ১৯৫৮ (ইনসুলিন অণুর গঠন আবিষ্কার)
·
রসায়ন: ১৯৮০ (ভাইরাসের নিউক্লিওটাইডের ধারা আবিষ্কার)
এছাড়া আরও কয়েকজন নোবেল লরিয়েট ব্যক্তি ও
প্রতিষ্ঠান কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য চিহ্নিত হয়ে আছেন। এদের মধ্যে
রয়েছেন:
·
অটো
হাইনরিখ ওয়ারবার্গ
·
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য
রেড ক্রস
·
জর্জ বার্নার্ড শ: একমাত্র ব্যক্তি যিনি নোবেল পুরস্কার এবং অস্কার অ্যাওয়ার্ড, উভয়টিই লাভ করেছেন।
সমালোচনা
অন্যান্য সমাচোলনার মধ্যে নোবেল কমিটির
রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হওয়া এবং যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকেও বাদ দেয়া অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ন। তাদের ইউরোপীয় পক্ষপাত দুষ্টের অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে সাহিত্যে পুরস্কার প্রদান করার
ক্ষেত্রে।
শান্তি পুরস্কার
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয় কঠোরভাবে সমালোচিত হয়।
শান্তি পুরস্কারের মধ্যে সবচেয়ে সমালোচিত
ছিল লি ডাক থো এবং হেনরি কিসিঞ্জারকে পুরস্কার প্রদান। লি ডাক থো পরবর্তীতে
পুরস্কার প্রত্যাক্ষান করে।যা নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির দুইজন সদস্যের
পদত্যাগের কারণ হয়ে দাড়ায়। জানুয়ারি, ১৯৭৩ সালে উত্তর ভিয়েতনাম ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার যুদ্ধ বিরতি এবং সেখান থেকে
আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপটে তাঁদেরকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। যদিও
পুরস্কার প্রদানের মুহুর্তে দেশ দুটি যুদ্ধে লিপ্ত ছিল।অনেক সমালোচকদের মতে হেনরি কিসিঞ্জার শান্তি প্রয়োগ নয় বরং একজন যুদ্ধবাজ ছিলেন।
ইয়াসির আরাফাত, সাইমন পেরেস, ইয়াতজাক রবিন ১৯৯৪ সালে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নোবেল পান। যদিও ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের অঙ্গীকারের
বিষয়টি অমিমাংসিতই ছিল এবং শেষ পর্যন্ত কোন চুক্তিতে পৌছাতে পারে নাই। পুরস্কার ঘোষনার পরপরই নরওজীয় নোবেল কমিটির
একজন আরাফাতকে সন্ত্রাসি বলে আখ্যা দেয় এবং পদত্যাগ করেন। আরাফাতের ব্যপারে অতিরিক্ত সন্দেহ বিভিন্ন
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে।
২০০৯ সালে বারাক ওবামার নোবেল বিজয় ইদানিং কালের সবচেয়ে সমালোচিত
পুরস্কার। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহনের মাত্র
১১ দিন পর মনোময়ন বন্ধ করা হয়, যদিও সত্যিকারের মুল্যায়ন করা হয়েছিল পরবর্তী ৮ মাস ধরে। ওবামা নিজেই বলেন যে, তিনি তাকে এই পুরস্কাররের যোগ্য মনে করেন না। পূর্ববর্তী নোবেল বিজয়ীরা এই তর্কে বিভক্ত
হয়ে পড়ে,
একদল মনে করে
ওবামা এই পুরস্কারের যোগ্য কিন্তু অন্য দল তাকে এই পুরস্কারের যোগ্য মনে করে না।
সাহিত্য পুরস্কার
বিংশ শতাব্দীর বেশ কয়েকজন জগৎখ্যাত
সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন নি। এর মধ্যে অন্যতম হলেন বোরহেস। কেউ কেউ নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন
যেমন ফ্রান্সের জঁ পল সার্ত। তিনি নোবল ঘোষণার আগেই সুইডিশ একাডেমীকে চিঠি
লিখে জানিয়েছিলেন যে তাঁকে যেন নোবেল পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা না হয়। সুইডীশ
একাডেমীর একজন সদস্য নাট আহলান্ড ২০০৪ সাল এলফ্রিডে ইয়েলিনেকের সাহিত্য পুরস্কারের বিরোধিতা করেন। পরবর্তিতে
তিনি এই বলে পদত্যাগ করেন যে, এটা প্রগতিশীল শক্তির বিরুদ্ধে এক অপুরণীয় ক্ষতি
এবং শিল্পকলায় সাহিত্যের দৃষ্টিভঙ্গীকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। তিনি ইয়েলিনেকের কাজকর্মকে শিল্পকলা বহির্ভূত সাহিত্যকর্ম বলে
অভিহিত করেন। ২০০৯ সালে হের্টা মুলারের পুরস্কার সমালোচিত হয়। দ্যা ওয়াশিংটন পোষ্ট এর মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ সাহিত্য সমালোচক এবং অধ্যাপকদের কাছে
তার লেখার গ্রহণযোগ্যতা নেই। এসকল সমালোচনা পুরস্কারটিকে একটু ইউরোপীয়
পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রমাণ করে।২০১৬ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন গায়ক বব ডিলানকে সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার দিলে
বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। বব ডিলানই প্রথম গায়ক ও গীতিকার যাকে সাহিত্যে
নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে নোবেল কমিটি। এর আগে দার্শনিক বার্টাণ্ড রাসেল এবং ব্রিটেনের প্রধান মন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করায়
সমালোচনা হয়েছিল।
বিজ্ঞান পুরস্কার
১৯৪৯ সালে পর্তুগীজ স্নায়ু বিশেষজ্ঞ এন্টনিও ইকাস মনিজ প্রিফ্রন্টাল লিউকোটমির উন্নয়নের জন্য
চিকাৎসায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তার পূর্ববর্তী বছরে ডঃ
ওয়ালটার ফ্রীম্যান একই পদ্ধতির একটি সংস্করন উন্নয়ন ঘটান যা
আরও দ্রুত ও সহজ। মূল পদ্ধতির প্রচারগত সল্পতার কারণে ফ্রীম্যানের উদ্ভাবন সঠিকভাবে বিবেচিত হয়নি অথবা আধুনিক
চিকিৎসা মুল্যবোধের সাথে যায় নি। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন এর মত সাময়িকীতে প্রকাশনা পাওয়ায় লিউকোটমি
ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মনিজের পুরস্কার প্রাপ্তির পরবর্তী তিন বছর
শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে ৫,০০০ এর মত লোবোটমি হয়।
No comments