Earthquake (ভূমিকম্প)
ভূমিকম্প
ভূ-অভ্যন্তরে শিলায়
পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের
কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।কম্পন-তরঙ্গ থেকে
যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে
উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক
সেকেণ্ড থেকে এক/দু-মিনিট স্থায়ী হয়। মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভব করা যায়
না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক
ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে।
ভূমিকম্পের
কেন্দ্র
পৃথিবীর অভ্যন্তরে
যেখান থেকে ভূকম্প-তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। এই কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের
মাধ্যমে সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে। শিলার পীড়ন-ক্ষমতা সহ্যসীমার বাহিরে চলে গেলে
শিলায় ফাটল ধরে ও শক্তির মুক্তি ঘটে। তাই প্রায়শই ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখা
অংশে অবস্থান করে। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিমি.-র মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান
করে। তবে ৭০০ কিমি. গভীরে গুরুমণ্ডল (Mantle) থেকেও ভূ-কম্পন উত্থিত হতে পারে।
ভূমিকম্পের
কারণ
সাধারণত তিনটি প্রধান
কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
ভূপৃষ্ঠজনিত
আমাদের ভূ -পৃষ্ঠ
অনেকগুলো প্লেট-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো একটি আরেকটির থেকে আলাদা থাকে ফল্ট
বা ফাটল দ্বারা। এই প্লেটগুলোর নিচেই থাকে ভূ-অভ্যন্তরের সকল গলিত পদার্থ। কোনও
প্রাকৃতিক কারণে এই গলিত পদার্থগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটলে প্লেটগুলোরও কিছুটা
স্থানচ্যুতি ঘটে। এ কারণে একটি প্লেটের কোনও অংশ অপর প্লেটের তলায় ঢুকে যায়, যার ফলে ভূমিতে কম্পন
সৃষ্টি হয়। আর এই কম্পনই ভূমিকম্প রূপে আমাদের নিকট আবির্ভূত হয়।
আগ্নেয়গিরিজনিত
কখনো কখনো
আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হবার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে
পারে।
শিলাচ্যুতিজনিত
কখনো কখনো পাহাড়
কিংবা উচু স্থান থেকে বৃহৎ পরিসরে শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূপাত
কোনো কারণে পাহাড়-পর্বত
হতে বৃহৎ শিলাখণ্ড ভূত্বকের ওপর ধসে পড়ে ভূমিকম্প হয়। সাধারণত ভাঁজ পর্বতের নিকট
অধিক ভূমিকম্প হয়।
তাপ বিকিরণ
ভূত্বক তাপ বিকিরণ
করে সংকুচিত হয়ে পড়লে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ভূমিকম্প হয়।
ভূগর্ভস্থ বাষ্প
নানা কারণে ভূগর্ভে
বাষ্পের সৃষ্টি হয়। এই বাষ্প ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে তা ভূত্বকের নিম্নভাগ ধাক্কা
দেয়; ফলে প্রচণ্ড ভূকম্পন
অনুভূত হয়। এবং ভূমিকম্প হয়।
হিমবাহের প্রভাবে
কখনো কখনো প্রকাণ্ড
হিমবাহ পর্বতগাত্র হতে হঠাৎ নিচে পতিত হয়। এতে ভূকম্প কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প
হয়।
বিভিন্ন দেশে
ভূমিকম্প
এশিয়া ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ভূমিকম্প বলতে আসলে
বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ভূমিকম্পকে বোঝায়। কারণ বাংলাদেশ আসলে ভারত ও মায়ানমারের ভূঅভ্যন্তরের দুটি ভূচ্যুতির
(faultline)
প্রভাবে আন্দোলিত
হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ,ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার
(মায়ানমারের) টেকটনিক
প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে।
ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি (১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের পর
থেকে) দীর্ঘদিন যাবৎ হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে
আছে, অপেক্ষা করছে বড়
ধরনের নড়াচড়ার, অর্থাৎ বড় ধরনের
ভূ-কম্পনের। বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায়
রয়েছে, যথা: বগুড়া চ্যুতি
এলাকা, রাজশাহীর তানোর
চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি
এলাকা, সীতাকুণ্ড টেকনাফ
চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির
ডাওকী চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাওকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে
রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা।
সাল ও তারিখ
|
স্থান
|
ভূমিকম্পের মাত্রা
(রিখটার স্কেল) |
১৮৮৫, ১৪ জুলাই
|
মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ
|
৭+
|
১৯১৮, ৮ জুলাই
|
শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশ
|
৭.৬
|
১৯৩০, ২ জুলাই
|
ধুবড়ি, আসাম, ভারত
|
৭.১
|
১৯৩৪, ১৫ জানুয়ারি
|
বিহার, ভারত
|
৮.৩
|
১৯৩৪, ৩ জুলাই
|
আসাম, ভারত
|
৭.১
|
১৯৫০, ১৫ আগস্ট
|
আসাম, ভারত
|
৮.৭
|
১৯৯৭, ২২ নভেম্বর
|
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
|
৬.০
|
১৯৯৯, জুলাই
|
মহেশখালি দ্বীপ, বাংলাদেশ
|
৫.২
|
২০০২
|
বাংলাদেশের
চট্টগ্রামে ৪০ বার হয়
|
-
|
২০০৩, ২৭ জুলাই
|
বরকল উপজেলা, রাঙামাটি, বাংলাদেশ
|
৫.১
|
বাংলাদেশ ও
তৎসংলগ্ন এলাকার ৮৫ বছরের ভূমিকম্পের সংক্ষিপ্ত রেকর্ড।
|
প্রাকৃতিকভাবেই কার্বন চক্রের প্রভাবে ভূমিকম্প
হয়ে থাকে, বাংলাদেশেও তার
ব্যত্য়য় হয় না। এদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিগত প্রায় ২৫০ বছরের
ভূমিকম্পের নথিভুক্ত তালিকা পাওয়া যায়। এ তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের পর
থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে
সংঘটিত হয়েছে ১০০'রও বেশি ভূমিকম্প; তন্মধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের পরে। এ
থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত ৩০ বছরে (পরিপ্রেক্ষিত২০০৪) ভূমিকম্প সংঘটনের
মাত্রা বেড়েছে।
বাংলাদেশে ৮টি
ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে, যথা: বগুড়া চ্যুতি
এলাকা, রাজশাহীর তানোর
চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি
এলাকা, সীতাকুণ্ড টেকনাফ
চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির
ডাওকী চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাওকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে
রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা। বাংলাদেশ, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার
(মায়ানমারের)টেকটনিক
প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে।
ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি (১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের পর
থেকে) দীর্ঘদিন যাবৎ হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে
আছে, অপেক্ষা করছে বড়
ধরনের নড়াচড়ার, অর্থাৎ বড় ধরনের
ভূ-কম্পনের। এই সূত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
লেমন্ট-ডোহের্টি আর্থ অবজারভেটরির ভূতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন (জুলাই ২০১৬) এতদিন
প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংশ্লিষ্ট মডেলের অভাবে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়
করা যাচ্ছিল না। এবার তাঁরা সেটি করতে পেরেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের নিচে জমে
ওঠা টেকটনিক প্লেটে চাপ জমে উঠছে কম করে বিগত ৪০০ বছর ধরে। এই চাপ যখন মুক্ত হবে
তখন সৃষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা দাঁড়াবে প্রায় ৮.২ রিখটার, এমনকী তা ৯ রিখটারেও
পৌঁছতে পারে। প্রায় ১৪ কোটি মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প
হয় এবং ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে হয় ৬.০ মাত্রার
ভূমিকম্প। এমনকি বাংলাদেশ
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BUET) মানমন্দিরে জানুয়ারি ২০০৬ থেকেমে ২০০৯ পর্যন্ত ৪ বছরে, রিখটার স্কেলে ৪
মাত্রার ৮৬টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে ৫ মাত্রার চারটি
ভূ-কম্পনও ধরা পড়ে। বাংলাদেশ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানমন্দিরে মে ২০০৭ থেকে জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০টি
ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়, তন্মধ্যে ৯টিরই রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিলো ৫-এর উপরে, এবং সেগুলোর ৯৫%-এরই
উৎপত্তিস্থল ছিলো ঢাকা শহরের ৬০০
কিলোমিটারের মধ্যে। অতীতের এসব রেকর্ড
থেকে দেখা যায় ভূমিকম্পের মাত্রা না বাড়লেও ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের পর
থেকে ভূমিকম্প সংঘটনের হার বেড়েছে, অর্থাৎ ঘন ঘন স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। মতবিরোধ থাকলেও অনেক ভূতাত্ত্বিক ছোট
ছোট ভূমিকম্প সংঘটন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেন। অতীতের এসব রেকর্ডকে
প্রাধান্য দিয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন যে কোনও সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮
মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।
বাংলাদেশকে
ভূমিকম্পের তীব্রতার ভিত্তিতে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। (তথ্যসূত্র:GSB)
বুয়েটের গবেষকদের প্রস্তুতকৃত
ভূ-কম্পন-এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৪৩% এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে (জোন-১), ৪১% এলাকা মধ্যম
(জোন-২) এবং ১৬% এলাকা নিম্ন ঝুঁকিতে (জোন-৩) রয়েছে। যেখানে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের
ভূ-কম্পন মানচিত্রে ২৬% উচ্চ, ৩৮% মধ্যম এবং ৩৬% নিম্ন ঝুঁকিতে ছিলো। নতুন মানচিত্র
অনুযায়ী, মাত্রাভেদে
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অবস্থান নিম্নরূপ:
জোন-১: পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্পূর্ণ অংশ, এবং ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অংশবিশেষ।জোন-২: রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং ঢাকা।
জোন-৩: বরিশাল, পটুয়াখালী,
এবং সব দ্বীপ ও চর।
জোন-১
জোন-১-এ অবস্থিত
বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। কারণ সিলেট-সুনামগঞ্জ ও ভারতের শিলংকে বিভক্ত করেছে ডাওকি
নদী, আর এই ডাওকি নদী ডাওকি
চ্যুতি (Dauki
fault) বরাবর অবস্থান করছে, আর ভূতাত্ত্বিক চ্যুতিগুলোই বড় ধরণের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। সিলেটের সীমান্ত
এলাকাবর্তী এধরণের চ্যুতিগুলোর কোনো কোনোটিতে সাব-ডাউন ফল্ট রয়েছে, যেগুলো ভূমিকম্প
ঘটালে বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়
সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।কারণ এতে করে পাথারিয়া অন্তর্চ্যুতি (Patharia anticline) নিচের দিকে মোচড়
দিতে পারে।
জোন-২
জোন-২-এ অবস্থিত রাজশাহী জেলা,
ভূতাত্ত্বিকভাবে
সক্রীয় ভূমিকম্প এলাকায় অবস্থিত এবং তাই ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের
ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সক্রীয় ভূমিকম্প
এলাকায় থাকার কারণে এই অঞ্চলও যেকোনো সময় মারাত্মক ভূমিকম্পের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত
হতে পারে।
জোন-২-তে থাকা
রাজধানী শহর ঢাকায় সে হিসেবে ৮ মাত্রার
ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা বা ফল্টলাইন নেই। তবে ঢাকা থেকে ৬০
কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক
ফাটল রেখা রয়েছে। সরকারি তথ্যসূত্রমতে, ঢাকায় রাতের বেলায় ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৯০,০০০ লোক হতাহত হবে।
দিনের বেলায় হলে হতাহতের সংখ্যা হবে ৭০,০০০। ঢাকা সিটি
কর্পোরেশন অঞ্চলের ৩,২৬,০০০ ভবনের উপর
পরিচালিত সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, এমন তীব্রতার ভূমিকম্পে প্রায় ৭২,০০০ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে, আরও ৮৫,০০০ ভবন মাঝারি ধরণের
ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু দালান ভাঙার কারণে ক্ষয়ক্ষতি হবে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের
সমতুল্য সম্পদ। এমনকি ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ পরিচালিত রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট
টুলস ফর ডায়াগনসিস অফ আরবান এরিয়াস এগেইন্সট সাইসমিক ডিযাসটার (রেডিয়াস) জরিপে
ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকাও অন্যতম।
এছাড়াও জাপানের টোকিও ইনস্টিটিউট অফ
টেকনোলজি (টিআইটি)-র সহায়তায় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ
কর্তৃক পরিচালিত এক সাম্প্রতিক (২০১০) গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার ভূমিতে বিভিন্ন
প্রকারের মাটি (লাল মাটি, নরম মাটি ইত্যাদি) রয়েছে। ঢাকার সম্প্রসারিত অংশে জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা
আবাসন এলাকা রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় নরম মাটি ও ভরাট করা এলাকার মাটি ভূমিকম্পের
কম্পন তরঙ্গকে বাড়িয়ে দেয়, ফলে ভূমিকম্পের তীব্রতা বাড়ে। মাটির বৈশিষ্ট্যের সাথে যোগ হয় ভবনের বা
স্থাপনার কাঠামো। এই দুইয়ের সম্মিলনে ভূমিকম্পের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির
সম্ভাব্যতা বাড়ে-কমে। গবেষকরা তাই ঢাকার বর্ধিতাংশের আলগা মাটিসমৃদ্ধ জনবসতিকে
যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন।
No comments